জাপান-বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকায় হচ্ছে প্রোটনথেরাপির ক্যান্সার হাসপাতাল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুইহাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানী ঢাকার পূর্বাচলে নির্মিত হবে উপমহাদেশের প্রথম ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রোটনথেরাপির ক্যান্সার হাসপাতাল। এই চুক্তির আওতায় জাপান বাংলাদেশে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল, একটি নার্সিং কলেজ এবং একটি মেডিকেল টেকনোলোজি প্রতিষ্ঠান রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবে।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে এই হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে জাপান গ্রিন হসপিটাল, আইচি হসপিটাল লিমিটেড এবং এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলোজি লিমিটেড (ইএটিএল)-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের এই চুক্তির মাধ্যমে হাসপাতালটি দেশবাসীর অনেক কষ্ট লাঘব করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, জাপানে অবস্থিত বাংলাদেশের আম্বাসেডর রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন জাপান গ্রিন হসপিটাল থেকে হিরোয়িকি কোবায়িশি, আইচি হসপিটাল লিমিটেড থেকে ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ইএটিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ মুবিন খান।

চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিষ্ঠান গুলোহচ্ছে-জাপান গ্রিন হসপিটাল, আইচি হসপিটাল লিমিটেড এবং এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলোজি লিমিটেড (ইএটিএল)। এই চুক্তির আওতায় জাপান বাংলাদেশে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল, একটি নার্সিং কলেজ এবং একটি মেডিকেল টেকনোলোজি প্রতিষ্ঠান রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

এই ক্যান্সার হাসপাতালে জাপানের সবচেয়ে উন্নতমানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রোটন থেরাপি দিয়ে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করা হবে, যা এখন পর্যন্ত সাউথ এশিয়া বা ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের কোন হাসপাতালে নেই। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রোটন থেরাপি, জাপানে ক্যান্সার চিকিৎসায় বিরাট পরিবর্তন দেখিয়েছে, যা এই হাসপাতালের মাধ্যমে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে।

এই প্রযুক্তি কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া এটি ক্যান্সার টিউমারের ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধীরে ধীরে সব ধরনের ক্যান্সারের জীবাণুকে ধ্বংস করতে কাজ শুরু করে প্রোটন থেরাপি।

জাপান গ্রিন হসপিটাল, একই গ্রুপ শিপ আইচি মেডিকেল সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমাদের দেশের হার্ট এবং কিডনি রোগের চিকিৎসায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যার আওতায় দেশের উত্তরায় একটি হাসপাতাল নির্মাণাধীন, যা আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হবে।

মধ্যম আয়ের দেশ এই বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতকে এখন বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই উপমহাদেশে যেভাবে ক্যান্সার রোগ বেড়ে চলছে, তাতে উন্নয়নশীল বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার রোগ ব্যবস্থাপনা ও মোকাবেলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ যেন সময়ের দাবী।

২০০৫ সালের দিকে মাত্র শতকরা সাড়ে সাত ভাগ লোক এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যেতেন, কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর ক্যান্সার রিসার্চের মতে ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মৃত্যু সংখ্যা দুইগুণের কাছাকাছি প্রায় ১৩% হবে। ২০১৮ সালে দেড় লক্ষ নতুন ক্যান্সার রোগী ধরা পড়ে এবং প্রায় ১.০৮ লক্ষ লোক প্রতিবছর এই দেশে ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। জাপান গ্রিন হসপিটাল, আইচি হসপিটাল লিমিটেড এবং এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলোজি লিমিটেড (ইএটিএল) বাংলাদেশের একটি স্বপ্নের প্রজেক্ট এই ক্যান্সার হাসপাতাল।

ঢাকার পূর্বাচলে এই ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের মানুষের কাছে উন্নত প্রযুক্তির সহজলভ্য ক্যান্সার চিকিৎসা পৌঁছে দেয়া, এই রোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মেডিকেল জনশক্তি তৈরি, ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে ক্যান্সার রোগের ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং ক্যান্সার রোগ সংক্রান্ত আরও রিসার্চ এর সুযোগ সৃষ্টি করা।

ক্যান্সার সচেতনতা ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৭টি সেন্টারে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। দেশে মাত্র ১৫০ দক্ষ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ১৬ জন শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।

চিকিৎসা পদ্ধতি যা রয়েছে তা হলো-Dual energy Linear accelerators, Cobalt, Brachytherapy, ডিপএক্সরে এবং টিউবারবিম। রোগ পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ সংক্রান্ত Diagnostic ফ্যাসালিটিজের মধ্যে রয়েছে PET-CT, SPECT-CT, digitalmammography যা stereotactic biopsy এর মাধ্যমে করা হয়।

কিন্তু জাপান বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই ক্যান্সার হাসপাতালের মাধ্যমে দেশে যুক্ত হচ্ছে ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রোটনথেরাপি। দেশের ক্যান্সার চিকিৎসাকে উন্নতদেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে জাপান গ্রিন হসপিটাল, আইচি হসপিটাল লিমিটেড এবং ইএটিএল-এর এই ক্যান্সার হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ এবং ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার এই ত্রী-পক্ষীয় চুক্তি একটি বিরাট মাইলফলক, যার মাধ্যমে অচিরেই দেশবাসী ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী তার আশা ও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর