১টি কলা খেয়ে দূরে রাখুন ১২টি স্বাস্থ্য সমস্যা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতি পরিচিত সস্তা একটি ফল হল কলা। সারা বছর পাওয়া যায় এই ফলটি। কিন্তু এই ফলটি খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি না। আবার অনেকে মনে করেন কলা শরীরকে মোটা করে তোলে। অথচ নিয়মিত কলা খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কলা দৈনন্দিন অনেক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে দেহকে সুস্থ রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন একটি কলা, আর দেখুন এর ম্যাজিক। তাহলে জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলার রাখার উপকারিতা।

(i) কলা একটি আঁশযুক্ত ফল। এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন একটি করে কলা খান।

(ii) শরীরে হিমোগ্লোবিন ও ইনসুলিনের জন্য প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-বি৬ প্রয়োজন। আর কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি৬ আছে, যা দেহে পুষ্টি যোগিয়ে থাকে।

(iii) প্রতিদিন ৩টি করে কলা খেলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করবে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখুন, দেখবেন রক্তচাপ আপনার নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে।

(iv) প্রতিদিন ব্যায়াম করার আগে ২ টি কলা খেয়ে নিন। এটি আপনার দেহের রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখবে এবং তার সাথে ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রন করবে।

(v) কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। ফলে নিয়মিত কলা গেলে দেহের রক্ত শূন্যতা দূর হয়ে যায়।

(vi) কলা ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দিয়ে থাকে। ফলে অন্য কোন খাবার খাওয়ার রুচি ও আগ্রহ থাকে না। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

(vii) এক গবেষণায় বলা হয়েছে আঁশযুক্ত খাবার কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। প্রতিদিন কলা খান আর হৃদ রোগ থেকে দূরে থাকুন।

(viii) শরীরের পেশির সুস্থতার জন্যও কলা বেশ উপকারী। ব্যায়ামের আগে কিংবা পরে কলা খান এটি আপনার পেশীর সমস্যা দূর করবে এবং পায়ের মজবুত পেশী গঠনে সাহায্য করে।

(ix) আমরা অনেকই মনে করে থাকি লেবু, আর কমলাতেই শুধু ভিটামিন সি আছে। কিন্তু মজার ঘটনা কলাতেও পাওয়া যায় কিছু পরিমাণে ভিটামিন সি। এছাড়া প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় কলা থেকে।

(x) কলাতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগসিয়াম আছে যা বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। আমরা অনেক সময় বিভিন্ন করাণে বিষণ্ণতায় ভুগে থাকি। এই বিষণ্ণতা দূর করতে কলা অনেক বেশি কার্যকরী।

(xi) কলা দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। কলাতে প্রচুর পরিমাণের ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন, মিনারেল আছে যা দেহের এনার্জি লেভেল ঠিক রেখে শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। প্রতিদিন নাস্তায় ১টি কলা রাখুন এটি আপনাকে সারা দিনে কাজে এনার্জি দিবে।

(xii) কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবারহ করে থাকে। এটি দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।

আরও জানতে পড়ুন: পাকা কলা খাওয়ার ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা! 

আমরা অনেক সময়ই কলা দেখলে নাক কুঁচকে ফেলি, কিন্তু প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা খাওয়ার কী কী উপকারিতা আছে তা জানা থাকলে নাক কুঁচকে হলেও অনেক স্বাস্থ্য-সচেতন মানুষ কলা খাবেন, তা হলপ করে বলা যায়। আসুন জেনে নেয়া যাক কলার এমন দশটা উপকারিতার কথা।

(i) হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: পাকা কলা পটাশিয়ামের আধার। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেলে আপনার হৃদযন্ত্র অনেক বেশি সচল থাকবে এবং হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।

(ii) কিডনি সুস্থ রাখে: কলার পটাশিয়াম এমনকি কিডনিও ভালো রাখে। ইউরিনে ক্যালসিয়াম জমা হতে বাধা দেয় বলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে হাঁড় মজবুত হওয়ার জন্যও আরও বেশি ক্যালসিয়াম বরাদ্দ থাকে।

(iiiশরীরে শক্তি যোগায়: কলাতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা এবং সল্যুবল ফাইবার, যা ধীরে হলেও দৃঢ় শক্তির যোগান দেয় শরীরে। এ কারণে খেলোয়াড়দের  প্রায়ই খেলার আগে বা খেলা চলাকালীন সময়ে কলা খেতে দেখা যায়।

(iv) খাদ্য হজমে সহায়তা করে: কলার ফাইবার এবং প্রোবায়োটিক অলিগোস্যাকারাইজড হজমে দারুণ সহায়ক। এর ফলে আপনার শরীর আরও বেশি পরিমাণে পুষ্টি সঞ্চয় করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ল্যাক্সেটিভ না নিয়ে অতিরিক্ত পাকা কলা খেয়েই দেখুন না!

(v) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে বিটামিন বি৬, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এ্যাসিড সৃষ্টি করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ, শরীরে উৎকৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য কলার জুড়ি মেলা ভার।

(vi) পাকস্থলির আলসার এবং বুক-জ্বালা রোধ করে: পাকস্থলির আলসারে ভুগছেন? কিংবা বুক-জ্বালা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না? নিয়মিত কলা খান। কলা প্রোটেক্টিভ মিউকাস লেয়ার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে, যা আপনাকে বুক-জ্বালা এবং পাকস্থলির আলসার থেকে রক্ষা করবে।

(vii) ক্যন্সারের ঝুঁকি কমায়: সাম্প্রতিক কিছু গবেষনায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পাকা কলা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ TNF-A  নামক এক ধরণের যৌগ সরবরাহ করে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। এতে করে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

(viii) মানসিক চাপ কমায় ও সুনিদ্রায় সহায়তা করে: কলায় আছে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড, যা সেরোটোনিনে পরিবর্তিত হয়। সেরোটোনিনের সঠিক মাত্রা আপনার মুড ঠিক রাখবে এবং মানসিক চাপ কমাবে। এতে করে আপনার ভালো ঘুম হবে।

(ix) ত্বক সজীব করে: কলার চামড়ায় কিছু পরিমাণে ফ্যাটি উপাদান আছে, যা ত্বকে ঘষলে ময়েশ্চারাইজারের মতো উপকার পেতে পারেন। আবার ব্রণ দূর করার জন্যও কলার চামড়া ব্যবহার করা হয়। তবে সব ধরণের ত্বকের জন্য তা কাজ নাও করতে পারে। তবু একবার চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই!

(x) শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে: কলা ডোপামিন, ক্যাটেচিন্স এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর দারুণ উৎস। এগুলো শরীরকে সার্বিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার কাজ করে।

আরও জানতে পড়ুন: রাতের বেলা কলা খাওয়া কি ঠিক? 

কলার অনেক গুণ, এটি পুষ্টিকর, সহজেই বাড়ায় শরীরের শক্তি। তবে রাতের বেলা এটা খেলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে বলে যে কথা বলা হয়, আসলেই কি তা ঠিক?আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ড. আশুতোষ গৌতম বলেন, রাতে কলা খাওয়ার ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই। তবে গভীর রাতে এটা না খাওয়াই ভালো।ভারী খাবার হওয়ায় কলা হজমে সময় লাগে বেশি। তাই ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগে এটা খাওয়া ভালো বলে মনে করেন তিনি।কলায় থাকা পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হওয়ায় পেটের সমস্যায় খাওয়া হলে তাতেও আরাম দেয়।সাধারণত ঠাণ্ডা লাগলে কলা বা টক জাতীয় ফল খেতে নিষেধ করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিমিত পরিমাণে যে কোনো কিছু খাওয়াতে ক্ষতির কিছু নেই। আর কলাতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাড়ায়।

পুষ্টিসমৃদ্ধ এ খাবারটি অসুস্থতার কারণে শরীর থেকে কমে যাওয়া মিনারেল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে, যা সর্দি কাশি ও জ্বর প্রশমিত করতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।মাইক্রোবায়োটিক নিউট্রিশনিস্ট শিল্পা অরোরা বলেন, “কলা খুবই স্বাস্থ্যকর ও শক্তিবর্ধক খাবার, তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে এটা বাদ দেওয়া ঠিক নয়। তবে কারো যদি ঠাণ্ডা, কাশির প্রবণতা বা অ্যাজমা থাকে, তাহলে  সন্ধ্যার পর কলা না খাওয়াই ভালো।”

তাহলে কি রাতে কলা খেতে কোনো সমস্যা নেই? 

রাতে মিষ্টি কিছু না খাওয়াই ভালো, বিশেষ করে খুব মিষ্টি জাতীয় ফল। কারণ এতে শরীরের এনার্জি লেভেল বেড়ে যায়। অথচ এটা হল ঘুমের সময়। তবে মিষ্টি কিছু যদি খেতেই হয়, তাহলে কলা খাওয়াতে ক্ষতির কিছু নেই।কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়ামের জন্য ঘুম ভালো হয়। এতে শর্করার পরিমাণ কম থাকায় ব্লাড সুগার লেভেল বাড়ায়ও না।তবে ঠাণ্ডা কাশিতে যারা ভুগছেন রাতে তাদের কলা খাওয়া ঠিক হবে কিনা সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর