এই গ্রীষ্মে আপনার বাগানের জন্য মন মাতানো ১০টি ফুলগাছ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসি আসি করে অবশেষে বসন্তের আগমন বেশ চুপিসারেই হয়ে গেল। শীতের প্রভাব কাটিয়ে প্রকৃতি যখন নতুনভাবে নিজেকে সাজাতে প্রস্তুত, হয়তো তখন আপনারও মন চাইবে নিজের পছন্দের বাগানটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিতে। আর আপনি যদি ফুলপ্রেমী হন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন বসন্তের নানা বাহারি ফুলে ছেয়ে যাক আপনার বাগান।

বাগান তৈরি হোক এই গ্রীষ্মে;

গ্রীষ্মের আগমনী সময়ে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে বাগানের প্রতি নজর দিন, যেন গ্রীষ্মের শুরুতেই ফুলের বাগান থাকে একেবারেই প্রস্তুত। কিন্তু গ্রীষ্মের জন্য উপযুক্ত ফুল কি হতে পারে? কোন ফুলে স্বাগত জানাবেন আপনার গ্রীষ্মকে?

১. গাঁদা

পৃথিবীতে এমন ফুল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যা গাঁদা ফুলের চাইতেও প্রাণবন্ত এবং রঙিন। গ্রীষ্মে আপনার বাগানে উজ্জ্বল কিংবা ঈষৎ হলুদ এবং কমলা রঙের গাঁদা ফুল থাকা চাই-ই চাই। এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং সামান্য পরিচর্চা। হাতের কাছে গাঁদা ফুলের চারা বিভিন্ন উৎসবের সময়ে আপনার বেশ অনেকখানি অর্থ সাশ্রয় করবে। তাই শুধুমাত্র বাগানের সৌন্দর্যই নয়, বিভিন্ন আলাদা দিক বিবেচনায় গাঁদাফুল থাকতে পারে আপনার তালিকায়।

বাগানের অপরিহার্য অঙ্গ গাঁদা ফুল;

২. অর্কিড

ভান্ডাস, ডেন্ড্রবিয়ামস এবং সিমবিডিয়ামস নামক অর্কিডগুলো বাংলাদেশে বেশ পরিচিত। যদিও বেশ পরিচর্চার প্রয়োজন তবুও আপনি চাইলেই বাগানে অর্কিড চাষ করতে পারবেন। সরাসরি সূর্যরশ্মি কিংবা ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশন যা কিছুটা আর্দ্রতা নষ্ট করে তা থেকে চারাগুলোকে দূরে রাখতে হবে। এমনকি ফল সবজি বা চুপসে যাওয়া ফুলগুলো থেকেও রাখতে হবে দূরে।

সৌন্দর্যের প্রতীক অর্কিড;

৩. গুল-মহার (কৃষ্ণচূড়া)

গুল্ম-হার, যেখানে গুল্ম মানে ফুল এবং মহার মানে ময়ূর। যা ফুলটির লালচে আভাও প্রকাশ করে। গুল্ম-হার বা কৃষ্ণচূড়া আকারে বেশ বড়। বৃক্ষ শ্রেণীভুক্ত এই গাছটি ঘরের বাইরে থেকে আপনার চারপাশের শোভা বর্ধনে সহায়তা করবে। প্রশ্ন আসতে পারে এর আয়তন নিয়ে। কিন্তু বাড়ির পাশে গ্রীষ্মের দুপুরে ছায়ার জন্য কিংবা বাগানের নিরাপত্তার জন্য কৃষ্ণচূড়া হতে পারে ভাল একটি উপায়।

বাগানে থাকুক কৃষ্ণচূড়া;

৪. গোলাপ

নজরকাড়া সৌন্দর্য আর মনোমুগ্ধকর সুগন্ধের কারণে গোলাপকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আপনি চাইলেই নানা রঙের গোলাপ দিয়ে সাজাতে পারেন অন্দরমহল কিংবা বাহিরের দিকটা। চায়না গোলাপ যা সাধারণত হিবিসকাস নামে পরিচিত। ঘর সাজানো কিংবা ব্যবসায়িক কাজে দুটোতেই আপনাকে সাহায্য করবে। গোলাপের ক্ষেত্রে যদিও বাড়তি কিছু পরিশ্রম করা লাগবে। তবে বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতে গোলাপের বিকল্প নেই বললেই চলে। আর গোলাপের মাঝে বিভিন্ন রঙ আপনি পাবেন। চেষ্টা করুন, আপনার বাগানের গোলাপের মাঝে যেন বিভিন্ন রঙের সুন্দর একটি সমন্বয় ঘটাতে পারেন।

বাগানের আবশ্যক গোলাপ ফুল;

৫. কনকচাঁপা

একদম বসন্তের শেষ দিকটায় কনকচাঁপা ফুলের গন্ধে গোটা পরিবেশ ছেয়ে যায় কয়েক সপ্তাহের জন্য। সজীব পাতা, উজ্জ্বল পাপড়ি আর সহস্র পরাগ ফুলটির প্রতি মৌমাছির আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দেয়।

৬. শিউলি

শিউলি ফুল বাংলাদেশের যেকোনো মানুষের কাছেই বেশ জনপ্রিয় এর মিষ্টি গন্ধের সুবাদে। সাদা পাপড়ি আর কমলা লালের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পরাগনালীর এই ফুল নিঃসন্দেহে আপনার বাগানের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে। শিউলি ফুল সাধারণত রাতের বেলায় ফোটে। আর টিকে থাকে ঠিক যে সময়ে পূর্ব আকাশে সূর্যের দেখা মেলে। প্রায়ই শিউলি ফুল বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন মালা তৈরির ক্ষেত্রে কিংবা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় উৎসবেও রয়েছে শিউলি ফুলের রয়েছে ব্যাপক কদর।

৭. বেলি

গ্রীষ্মকালীন এই ফুল সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়। বেলিফুল সাধারণত গুচ্ছ আকারে ফোটে।প্রতি শাখায় ফুল থাকে ৩-১২টি করে। এরা সাধারণত রাতে ফোটে এবং সে মুহূর্তে চারপাশটায় ফুলের সুবাস বর্ণাতীত। বেলি ফুল যে শুধুমাত্র সৌন্দর্যবান্ধব তা কিন্তু নয় বরং নানা সুগন্ধী তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। বেলি ফুলের ঝোপ শুধুই ফুল নয় বরং বাগানের সীমানা প্রাচীর হিসেবেও বেশ ভাল কাজ দিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন বেলি ফুলের বেশ কয়েকটি গাছ লাগানোর জন্য।

বেলি ফুল;

৮. মাধবী

মাধবী উদ্ভিদ হিসেবে বলতে গুল্ম বা ঝোপঝাড় জাতীয় একটি উদ্ভিদকে বোঝায়। ক্রমাগত বাড়তে থাকা এই উদ্ভিদ সবার কাছে পরিচিত এর মিষ্টি গন্ধ আর উজ্জ্বল রঙের ফুলের জন্য। স্বল্পায়ুর এই হলুদ ফুলের দেখা মেলে একেবারে বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে। বয়সের ব্যাপ্তি হিসেবে মাধবী টিকে থাকে কেবল দুই সপ্তাহের মতো। যদিও মাধবীলতার মতো এমন ফুলের প্রাচুর্য অন্যান্য গাছে দেখা যায় না বললেই চলে।

৯. নীলমণি

এই ফুলের নামকরণ সাধারণ কারো নয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম করেছেন। নীলমণি ফুল ফোটা এবং এর বৃদ্ধির জন্য আলোর প্রয়োজনীয়তা একেবারেই আবশ্যক। দেখতে অনেকটা হালকা নীল বা বেগুনি রং এর হয়ে থাকে নীলমণি। নীলমণি ফুলের রয়েছে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অংশ। ভেতরের দিকের গাঢ় পাপড়িযুক্ত অংশটি খানিকটা ছোট। আর বাইরের দিকে রয়েছে হালকা রঙের মঞ্জরী আর বৃতি। যা আকারে খানিক বড় এবং ফুলের অংশ বলে বিবেচ্য।

রবি ঠাকুরের প্রিয় নীলমণি;

১০. গ্ল্যাডিওলাস

গ্ল্যাডিওলাস এমন এক ফুল যা শুধু বসন্ত বা গ্রীষ্মের প্রতীক নয়। গ্ল্যাডিওলাস যেকোনো সময়ে ফোটে। বিচিত্র এবং দারুণ রঙের কল্যাণে দ্রুতই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গ্ল্যাডিওলাস। টব হোক বা ড্রাম কিংবা বাড়ির ছাদ, যেকোনো স্থানেই গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ করতে পারবেন আপনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাগান বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১ বিঘায় ২৫,০০০ স্টিক গ্ল্যাডিওলাস উৎপাদন সম্ভব যা ইতিমধ্যে দেশের রাজশাহী এবং পাবনা অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে সুদিন ফিরিয়ে এনেছে।

আভিজাত্যের প্রতীক গ্ল্যাডিওলাস;

এই ফুলের গাছগুলো ছাড়াও জবা, হাসনাহেনা, সূর্যমুখী বা ডালিয়া গাছও আপনি রাখতে পারেন আপনার বাগানের বাড়তি শোভা বর্ধনের জন্য।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর