জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনাকে ‘আমার নেত্রী’ বললেন বিএনপির হারুন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শপথগ্রহণের পর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুবিচার দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ। একই সঙ্গে সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনাকে ‘আমার নেত্রী’ বলেও সম্বোধন করেন তিনি।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ, শ্রীলঙ্কার গীর্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এ সকল সন্ত্রাসী, যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।’

সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সারাদেশের মানুষ আজ বিক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট। জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হোক এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জনগণ চায় একটি ভোটের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হোক। দেশে আইনের শাসন থাকবে, সুশাসন থাকবে। জনগণের প্রতিনিধির দ্বারা দেশ শাসিত হবে -এটি এ দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, সংসদ নেতা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন। আমি আশা করব, আজ আমরা (বিএনপি) সংসদে প্রথম এসেছি, এত তাড়াতাড়ি অস্থির হয়েন না। আমি আপনাদের কাছে আহ্বান জানাব, বাস্তব অবস্থায় দেশের যে সংকট সেই সংকট সমাধানের জন্য আমার নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) আমি অনুরোধ করব, এ বিষয়ে আপনি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অহংকার আর দাম্ভিকতা না দেখিয়ে প্রকৃতপক্ষে দেশে যে সংকট চলছে- তা সমাধানের জন্য আমার নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) অনুরোধ করব। অনুরোধ করব সংসদ নেতাকে, এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

তিনি আরও বলেন, যাই বলেন না কেন, সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন। আমরা সংখ্যায় কম হতে পারি। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের ১৭ কোটি মানুষ আজকে জিম্মি, অসহায়। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিককার হরণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময় যে উপজেলা নির্বাচন হয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল তা বর্জন করেছে। আপনারা একাধিক প্রার্থী দিয়েছেন। আপনারা বিরোধী প্রার্থী দিয়েছেন। তারপরও সেখানে ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি। মানুষ কী অবস্থায় আছে- এটা নিশ্চয় আপনাদের উপলব্ধিতে আসা উচিত। এ সংকট থেকে যত দ্রুত আমরা বেরিয়ে আসতে পারব, ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে, কল্যাণকর হবে।

বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, মাননীয় নেত্রীকে বলতে চাই। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিম্ন আদালতের ফরমায়েশি রায়ে সাজাপ্রাপ্ত। উনি (খালেদা জিয়া) দীর্ঘ ১৫ মাস যাবৎ উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে নিম্ন আদালত থেকে অত্যন্ত জঘন্যতম মামলা-খুন, হত্যা, ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে উচ্চ আদালতে জামিন নিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সংসদ নেতার প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করব। ৭৩-৭৪ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা। উনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। এ অবস্থায় তার সত্যিকার অর্থে জেলখানায় থাকার কথা নয়। অন্ততপক্ষে উনার জামিন পাওয়া উচিত। উচ্চ আদালতে যদি আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন। আপনার যারা অ্যাটর্নি জেনারেল-সরকারি কর্মকর্তারা আছেন তারা যদি সত্যিকার অর্থে বাধা প্রদান না করেন তাহলে আমি বিশ্বাস করি উনি কালকেই জামিন পাবেন। উনি কালকেই জামিন পাবেন।

হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা প্রত্যাশ্য করব, সত্যিকার অর্থে এ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বিএনপি। এভাবে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। আপনাকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করতে হবে। দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু দেশে ব্যাপক ও ভয়াবহ লুটাপাট হচ্ছে। এই লুটপাটের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা বিরোধীদলের কয়েকজন সদস্য সংসদে এসেছি সত্যিকারের কথাগুলো বলতে। এই সংসদ নেতার সামনে দাঁড়িয়ে শপথ করে বলছি, শপথ নেয়ার সময় বলেছি ‘আমরা সত্য কথা বলব, ন্যায় কথা বলব’। সারা বাংলাদেশে যে সমস্ত ঘটনাগুলো সংঘঠিত হচ্ছে সেগুলো আমরা বলার চেষ্টা করব। মাননীয় স্পিকার আপনি সময় দেবেন, আমরা যদি সময় পাই তাহলে কথা বললে আপনারাই উপকৃত হবেন। আপনারা সঠিক তথ্যগুলো জানতে পারবেন।

বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা সংসদে প্রবেশ করেছি। তোষামোদি নয়, বাস্তব কথাগুলো বলার জন্য আমরা সংসদে এসেছি। আমরা ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। ভোটের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আমরা এ জায়গাটিকে হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বলেন, মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন বলেন, মালিক ইউনিয়ন বলেন, ঠিকাদার পরিষদ বলেন, ব্যক্তিগত নির্বাচনগুলোসহ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনও সরকারের ইশারা ছাড়া সম্পন্ন হয় না। এতে ভয়াবহ সংকট তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য মাননীয় সংসদ নেতা আপনি। আল্লাহপাক ক্ষমতার মালিক, আমরা কে কতদিন ক্ষমতায় থাকবো জানি না। কিন্তু আপনি পারেন এবং আপনি পারবেন তা প্রমাণ করেছেন। এখন এই বিষয়গুলোর জন্য আপনাকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

হারুনুর রশীদ বলেন, মাননীয় নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দেবেন। হ্যাঁ, বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছে। তারা সংসদে প্রবেশ করেছেন। তাহলেও অন্ততপক্ষে আমরা মানুষের কাছে, দেশের কাছে বলেতে পারব। আমরা সংসদে ঢোকার পর উনাকে (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী মুক্তি করেছেন। উনার বয়স হয়ে গেছে- অনুরোধ করব। উনার নিম্ন আদালতে বিচার করেন। এরপর উচ্চআদালত আছে। জজকোর্ট আছে। হাইকোর্ট আছে। বিচার করেন কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু অন্ততপক্ষে জামিনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।

প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন করে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বড়ভাই মাননীয় সংসদ সদস্য শেখ সেলিম ভাই। আমরা ওয়ান ইলেভেনের সময় একসঙ্গে কারাগারে ছিলাম। তার নাতি শ্রীলঙ্কায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান-কাল-পাত্র নেই। বাংলাদেশও এর থেকে মুক্ত নয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে হবে। অবশ্যই জঙ্গিমুক্ত করতে হবে। মাদকমুক্ত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারলে সাফল্য অর্জন করা যাবে।

বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে ঘটনাগুলো পত্রপত্রিকায় আমরা দেখতে পাই- ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, এ জন্য মাননীয় সংসদ নেতাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সন্ত্রাস দমন, ধর্ষণ, নির্যাতনের ক্ষেত্রে এক রকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে আমরা সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক জায়গায় যেতে পারব।

একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে নিঃসন্দেহে বিতর্ক রয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। যেভাবেই বলি না কেন, ৩০ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর