হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হতাশ কৃষকরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, সময়মতো সার-বীজ-কীটনাশক ও সেচ সুবিধা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে মনে করেন কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে দামের ব্যাপারে সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাম্পার ফলনের প্রকৃত লাভ ঘরে উঠবে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় সরকারিভাবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ২১৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ থেকে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কয়েকটি হাওর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা এখন ধানকাটার পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান বাড়িতে আনা, মাড়াই ও বিক্রির কাজে। কৃষাণীরাও ব্যস্ত বছরের একমাত্র ফসলটি ঘরে তুলতে। কারো যেন দম ফেলবার ফুরসত নেই। হাওরের চারিদিক যেন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের স্থানীয় কৃষক সবুজ মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে মণপ্রতি ধান চাষে খরচ পড়েছে সাতশ’ টাকার মতো। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি পাঁচশ টাকা। তবে এই ধান কয়েকদিন ধরে রাখা গেলে হয়তো দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু হাওরাঞ্চলে সেই ধরণের কৃষকের সংখ্যা একেবারেই কম।
কৃষক সাদেক বলেন, ধার-দেনা করে তারা চাষ করেন। পাওনাদার ধান কাটার আগেই বাড়ি এসে বসে থাকে। ফলে ক্ষেত থেকে ধান কাটার পরই তা বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না অধিকাংশ কৃষকের। পুরো মৌসুমে শ্রম দিয়েও ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন অষ্টগ্রাম উপজেলার আব্দুল্লাপুর গ্রামের কৃষক ছমেদ মিয়া। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ধানের ন্যায্য দাম না পেলে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”

নতুন ধান উঠতে শুরু করার পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় এখন মুখর হাওর এলাকায় ধান কেনা-বেচার প্রধান হাট চামড়া বন্দর। সেখানের আড়তদাররাও ধানের বাজার মূল্য কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
চামড়া বন্দরের আড়তদার এম এ হক বলেন, চাউলের বাজার নিম্নমুখী। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। ফলে অভাবী কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, “ধানের বর্তমান বাজার মূল্য, কাঁচা ধানের ক্ষেত্রে পাঁচশ’ টাকা, শুকানো হলে দাম পাঁচশ পঞ্চাশ টাকা।”

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর