হাওর বার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পিয়ন মো. হুমায়ুন কবির। তার কর্মস্থল সেখানে হলেও থাকেন বরিশাল শহরে। মাসিক বেতন ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু গড়ে তুলেছেন ছয় তলার আলিশান বাড়ি। এছাড়া বরিশাল শহরে ২০ শতক ও বাকেরগঞ্জে ১০১ শতক জমি কিনেছেন তিনি।
হুমায়ুন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউপির রঘুনাথপুর গ্রামের হতদরিদ্র আতাহার আলী মল্লিকের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে হুমায়ুন এইচএসসি পাস করেছেন। বাকিরা অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি। বর্তমানে তারা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

সূত্রমতে, এইচএসসি পাস হুমায়ুন কবির ১৯৯১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিয়ন পদে চাকরি পান। তার দীর্ঘ ২৮ বছরের চাকরি জীবনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ছিলেন। কাগজে-কলমে কর্মরত থাকলেও তিনি বেশিরভাগ সময় থাকেন বরিশাল শহর ও বাকেরগঞ্জের বাবার বাড়িতে। তবে হুমায়ুন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও এত সম্পদ কীভাবে গড়েছেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় গোলাম সরোয়ার নামে একজন দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল অফিসে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিয়ন পদে অল্প বেতনে চাকরি করে একজন ব্যক্তি কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়তে পারেন তা প্রশ্নবিদ্ধ।

অভিযোগে জানা গেছে, বরিশালে ২০ শতক জমির মধ্যে সদর জেএল নম্বর-৫৬, রুপাতলী মৌজা, এসএ ৪৭৯৮ খতিয়ানে ১০ শতক (দলিল নম্বর-৬৭৬৯), বরিশাল সদর জেএল নম্বর-৬৮, দক্ষিণ চর আইচা মৌজা, ৩১৭নম্বর খতিয়ানে ৫ শতক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জেএল নম্বর-১২৯ পূর্ব চর দপদপিয়া মৌজা, ১৭.২৫ খতিয়ানে ৫ শতক জমি (দলিল নম্বর-১৬৬৭)। যার প্রতিটি তার নিজ নামে সাব-কবলা করেছেন। বাজার মূল্য কমপক্ষে দুই কোটি টাকা।

এছাড়া পাদ্রীশিবপুর ইউপির ২০নম্বর রঘুনাথপুর মৌজায় এসএ ৮০৬, ২৮৫ খতিয়ানে ৪৬ শতক (দলিল নম্বর-৪৮৮৩), একই মৌজায় এসএ ৪৩০নম্বর খতিয়ানে ১০ শতক (দলিল নম্বর- ১১৫৭), এসএ ২৯০নম্বর খতিয়ানে ২০ শতক (দলিল নম্বর- ২৮৩৭), এসএ ৪৯২নম্বর খতিয়ানে দাতা আজাহার মৃধার কাছ থেকে ১০ শতক জমিসহ নিজ নামে সর্বমোট ১০১ শতক জমি সাব-কবলা করেন। যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা।

হুমায়ুন কবির তার কেনা বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা রোডের ১০ শতক জমির মধ্যে ৫ শতকের ওপর তৈরি করেছেন আলিশান ছয়তলা ভবনের বাড়ি। যার নির্মাণ কাজ বর্তমানেও চলছে। এরইমধ্যে ওই বাড়ি নির্মাণ করতে হুমায়ুন কবির তিন কোটি টাকার অধিক খরচ করেছেন বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।

হুমায়ুন নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বরিশাল ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকলেও অফিস প্রধান এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। সূত্রগুলোর দাবি, হুমায়ুন তার কর্তাবাবুকে ম্যানেজ করেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন বছরের পর বছর।

হুমায়ুনের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বরিশাল শহরের ধান গবেষণা রোডের নির্মাণাধীন মৌসুমী ভবনে রয়েছেন বলে জানান।

অভিযোগের ব্যাপারে হুমায়ুন বলেন, আমাকে হয়রানির জন্য একটি মহল দুদকে অভিযোগ করেছে। একপর্যায়ে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিকদের তার বাসায় চা খাওয়ার আমন্ত্রণ করেন। একই সময় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, হুমায়ুন অফিসেই রয়েছেন।

এদিকে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নেমে অবাক হন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক বরিশাল অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক আল-আমিন জানান, অভিযোগের অনেকটা সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর