হাওরের কান্না ও কিছু সুপারিশ

হরেক রকম কান্না এখন বাংলাদেশের হাওরে হাওরে। কৃষক-কিষাণীর কান্না, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের কান্না, নববধূর কান্না, পশু-পাখির কান্না, জেলেদের কান্না, মাছেদের কান্না, ফসলের কান্না। শুধু কান্না আর কান্না।

কান্নার নোনা জলের বাষ্প আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে ভাটি-বাংলার আকাশ বাতাস। কান্না মিশ্রিত সে বাতাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বাংলাদেশে। হাওরের দুই কোটি মানুষের কান্না এখন স্পর্শ করেছে ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়কে।

বাংলাদেশের ছয়টি জেলার (কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ৪১৪ টি হাওরের চারিদিকে এখন শুধু অথৈ জলরাশি। যে কৃষক জমির আইলে বসে মনের সুখে বিড়ি ফুঁকতেন, হুক্কা টানতেন আর নির্ভাবনার স্বপ্ন বুনতেন সে কৃষকের চোখে আজ জল।

এ বছর এপ্রিল মাসের শুরুতে অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাওর বেষ্টিত বিভিন্ন অঞ্চলের আট লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমির ৫.২৩ মিলিয়ন টন বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে হাওরবাসী। বাংলাদেশের ইতিহাসে এপ্রিল মাসে গত ৩৫ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

বিগত কয়েক দিনে প্রায় ৪১ কোটি টাকার ২১৩ টন মাছ মারা গেছে। মারা গেছে তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেছেন, পানিতে অক্সিজেন একেবারেই কমে যাওয়ায় এবং অ্যামোনিয়া ও অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মারা গেছে।

সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোণার ডিঙ্গাপোঁতা হাওর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় হাওরের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে কম। একই সঙ্গে অ্যামোনিয়ার পরিমাণও ছিল অস্বাভাবিক এবং পিএইচ বা ক্ষারের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের নিচে ছিল।

পানির এমন রাসায়নিক উপাদান মাছের জীবনধারণের জন্য অনুকূল না। সার্বিক দিক পর্যালোচনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির গুণাগুণ উন্নয়নের ফলে জলাশয়গুলোর পানি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছু সময় প্রয়োজন হবে।

দুর্যোগ মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সুপারিশ

হাওরের বর্তমান দুর্যোগ অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারকে এই মুহূর্তে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী-দুটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

স্বল্পকালীন পরিকল্পনাঃ

১. হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবিলম্বে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ব্যবস্থা গ্রহণ।

২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর ধারা-৪, ১৩, ১৪, ১৭ ও ধারা-১৮ দ্বারা গঠিত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল, জাতীয় দুর্যোগ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় গ্রুপ, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সমূহ দ্রুত সত্যিকার অর্থে কার্যকর ও গতিশীল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।

৩. দুর্যোগগ্রস্ত হাওর অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর ঋণের সুদ মওকুফ এবং কমপক্ষে আগামী দেড় বছরের জন্য ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা। তবে কোন অবস্থাতেই ঋণের আসল টাকা মওকুফ করা যাবে না। কারণ এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

৪. হাওরবাসীর প্রয়োজন অনুযায়ী আগামী দুই বছরের জন্য বিনা সুদে পর্যাপ্ত ঋণ বিতরণ করা যেতে পারে।

৫. বিদ্যুৎবিল এক বছরের জন্য সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করা যেতে পারে।

৬. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তি দেয়া যেতে পারে এবং বেতন সম্পূর্ণভাবে মওকুফ করে দেয়া যেতে পারে।

৭. বিল-হাওর ইজারামুক্ত করে মৎস্য আহরণের করতে হাওরবাসীর জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে।

৮. হাওর অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে অবিলম্বে জনবল পদায়ন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দ্রুত জনবল নিয়োগ নিতে হবে।

৯. হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে। তবে হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিতে প্লাঙ্কটনের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় হাওরে মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা হলে খাদ্য প্লাঙ্কটন খেয়ে মাছ সহজেই বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরের পানি চলে আসায় অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। কাজেই মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক অবিলম্বে হাওরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা প্রয়োজন।

১০. গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিশ্চিত করা।

১১. পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এর কৃষক সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা।

১২. বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।

১৩. সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বউদ্যোগে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান।

১৪. সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় বা স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা এবং বিষাক্ত পানি থেকে বাঁচতে ভূমিতে উভচর প্রাণী সাপের উপদ্রব বাড়তে পারে বিধায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত এনটিভেনম ইনজেকশন রাখা। হাওর অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা খুবই কম। অতিসত্বর হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল পদায়ন করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাঃ

১. হবিগঞ্জে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BRRI) একটি উপকেন্দ্র রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ হলো হাওর অঞ্চলভিত্তিক গভীর পানিতে উৎপাদিত উপযোগী উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের উদ্ভাবন যা পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছের চারারও বৃদ্ধি ঘটবে এমন একটি ব্যবস্থা। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত উফসী জাতের ধানগুলো বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে কতটুকু বিস্তার লাভ করেছে তা নিয়ে কোন উপাত্ত চোখে পড়ে না। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকর করা খুবই জরুরি।

২. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে ক্ষতির আশঙ্কা আছে তা ভাসমান চাষ পদ্ধতি দিয়েই অনায়াসে মোকাবেলা সম্ভব। বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে স্বীকৃতিপত্র গ্রহণ করে। সরকারের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে হাওর অঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ করা হলে অর্থনৈতিকভাবে হাওর অঞ্চলের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

৩. প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ হাওর অঞ্চলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন-জীবিকার মাধ্যম। পানি যখন শুকিয়ে যায় তখন এর সঙ্গে বেড়ে উঠা বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ জলাশয়ে গিয়ে জমা হয়। শুধুমাত্র সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উৎস যেমন হাওর, জলাশয় ইত্যাদি থেকে প্রতি বছর এক লাখ ২৩ হাজার ৮৩৫.৩৬ টন মাছ আহরণ করা হয়।

শুধু তাই নয় ভূমিহীন জনবসতির এক অপূর্ব কর্মসংস্থানের পথ হলো হাওরের মাছ আহরণ এবং তা থেকে তৈরি শুঁটকি মাছের ঘেরে নিজের শ্রম বিক্রি। এসব শুঁটকি অনেকের কাছে প্রিয় খাদ্য তালিকার অংশবিশেষ যা দেশীয় বাজার ছেড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিস্তৃত। কিন্ত যারা সত্যিকার অর্থে মৎস্যজীবী তারা এসব জলমহাল নিয়ন্ত্রণ করে না এবং এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এগুলো সরকারে কাছ থেকে নির্দিষ্ট বন্দোবস্তে ইজারা নেয় যা সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি বড় ক্ষেত্র।

কিন্তু যারা হাওর অঞ্চলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা বিষয়টিকে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করেন বলে সত্যিকার অর্থে যারা মৎস্যজীবী শ্রেণি তাদের কারো হাতেই জলাশয়গুলোর ব্যবস্থাপনাসহ মাছ সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে ভূমিহীন পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের নিমিত্তে মাছ সংশ্লিষ্ট শিল্প যেমন জাল তৈরির সুতা সরবরাহ, মাছের খাঁচা মেরামতসহ আরও অনেক সহায়ক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা জরুরি। এখন সারা দেশে মৎস্য চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগী পেশা হলেও হাওর অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে মৎস্য আহরণ করা গেলেও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মৎস চাষের কোন আলামত সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে তেমনটা দেখা যায় না। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে মধ্যে স্থানীয় জাতের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে উন্নতজাতের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উদ্ভাবন করেছে যার তেমন কোন অনুশীলন হাওর অঞ্চলে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে সরকার মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রকল্প হাতে নিতে পারে।

৪. প্লাবন ভূমিতে মুক্ত জলাশয়ে হাঁসের চাষ একটি সম্ভাবনাময় খাত প্রাকৃতিকগত কারণে বিশেষত হাঁস পানিতে সাঁতার কাটতে অভ্যস্ত। কিন্তু এই গৃহপালিত প্রাণীটিকে ঘিরে কোন প্রকার বৃহদাকার কিংবা মাঝারি খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা তা জানা নেই। তবে অর্থনৈতিক বিবেচনায় হাঁসের মাংস ও ডিমের একটি ভালো বাজার সারা দেশে রয়েছে যা স্বীকৃত। এসব অঞ্চলের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় জেলা বা উপজেলা অফিসগুলো বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে আগ্রহী খামারিদের পরামর্শ দিতে পারে।

৫. শুষ্ক মৌসুমে অনেক চারণভূমি রয়েছে যেখানে অনায়াসেই দুগ্ধ খামার, মহিষের খামার, ছাগলের খামার ইত্যাদি গড়ে উঠতে পারে কারণ শুষ্ক মৌসুমে সেখানে মাঠের পর মাঠ কাঁচা ঘাসে ভর্তি থাকে যা প্রাণী খাদ্যের উপযোগী। অপরদিকে গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণ একটি বাড়তি আয়বর্ধনমূলক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়ে বছরের বিশেষ মৌসুমে (ঈদে) কৃষিজীবী মানুষ লাভবান হতে পারেন। আবার বর্ষার মৌসুমে যাদের জমি আছে সেখানে বাথান তৈরি করে সব গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভ ঘরে তুলতে পারেন।

৬. বাঁধ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী ও পরিবেশবান্ধব সমাধানের জন্য শিগ্‌গির পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

৭. হাওর ও হাওরের কৃষকদের উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড(বিআরডিবি)কে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা জরুরি।

একটি রাষ্ট্রের সামর্থ্য শুধু তার প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন গতির ওপর নির্ভর করে না, বিপর্যয় প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় তার সামর্থ্য ও প্রশাসনিক দক্ষতার ওপরও নির্ভর করে।

বিষয়টি এখন আর দুর্যোগপূর্ণ বা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবির মধ্যে নেই, এটি চরম পরিবেশগত ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। আরো দেরি করলে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে সরকারের, এমনকি রাষ্ট্রের সক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। কাজেই উপরোক্ত সুপারিশ সমূহের আলোকে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

কথায় বলে ‘এক ফসলী ধান, হাওরবাসীর প্রাণ’ আর এই প্রাণকে হারিয়ে বুকভরা জল নিয়ে কাঁদছে হাওর। কাঁদছে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মানুষগুলো। এখন শুধু মাত্র বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে প্রহর গুনছেন তারা। হাওরের অথৈ জল আর এসব অসহায় মানুষের চোখের নোনা জল মিলে মিশে একাকার। যে বেলায় গোলায় ধান ভরার কথা সে বেলায় অশ্রুতে বুক ভাসাচ্ছে হাওরবাসী।

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’- ভুপেন হাজারিকার এই গানের সুরে সুরে আসুন আমরা আমাদের অনুভূতিকে জাগ্রত করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হাওরের অসহায় মানুষগুলোর জন্য আমাদের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেই। আমাদের একটু সহায়তাই পারে ২ কোটি হাওরবাসীর মুখে হাসি ফুটাতে, পারে প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় রুখে দিতে।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা আমরা যেভাবে মোকাবেলা করেছি তেমনিভাবে হাওরের এই বিপর্যয়ও আমরা মোকাবেলা করতে পারব ইনশাল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর