সাইবার দুনিয়ায় সক্রিয় উগ্রপন্থীরা

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। মূলত ইরাক ও সিরিয়ায় এর শক্ত ঘাঁটি থাকলেও বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসবাদী এই সংগঠনটি। গবেষকরা বলছেন, আগের সব সন্ত্রাসী সংগঠনের থেকে আলাদা আইএস। কারণ এরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শ ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর আগে আর কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দারুণভাবে সক্রিয় আইএস সদস্য ও এর মতাদর্শের অনুসারীরা। বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো থেকে শুরু করে কর্মী সংগ্রহের কাজটিও অনলাইনের মাধ্যমে করে থাকে আইএস। দীর্ঘদিন ধরে আইএস ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করা গবেষক ও সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে আইএস এর প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। গত বছর ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ নিয়ে দুটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এ নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। এ তিনটি প্রতিবেদনেই জঙ্গিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ঘনিষ্ঠতাকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

গত বছরের ৬ মার্চ বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামিক স্টেটপন্থী প্রায় ৪৬ হাজার টুইটার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে আইএসের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। তবে অনেকেই একাধিক টুইটার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে থাকতে পারে। এই গবেষণাটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন। ‘টুইটার সেনসাস’ নামের গবেষণাপত্রটি লেখেন ব্রুকিংসের জে এম বার্জার ও প্রযুক্তিবিদ জোনাথন মর্গ্যান।

ওই গবেষণায় বলা হয়, আইএস সমর্থকরা তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আইএসের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে টুইট করে থাকে। আইএস নিয়ন্ত্রিত ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব অ্যাকাউন্ট চালায় আইএস সমর্থকরা। আইএসপন্থী এসব টুইটার অ্যাকাউন্টের তিন-চতুর্থাংশ আরবিতে টুইট করে। আর পাঁচজনে একজন টুইট করে ইংরেজিতে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর গড়ে এক হাজার ফলোয়ার রয়েছে। শুরু থেকেই নিজেদের প্রোপাগান্ডা ছড়ানো ও সমর্থন আদায়ের জন্য সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে ইসলামিক স্টেট।

বার্জারের মতে, নিজেদের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য যে কোনো ধরনের প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আইএস।

আইএসপন্থী বেশির ভাগ টুইটার অ্যাকাউন্টই তৈরি হয় ২০১৪ সালের দিকে। সেই বছরই টুইটারের পক্ষ থেকে এক হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় আইএস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। তারপরও এর বৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি।

আইএসপন্থী এসব টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে কী ধরনের বিষয় প্রকাশ করা হয়? আইএসের সামরিক প্রশিক্ষণ ও পরিচালনা, সন্ত্রাসী সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও আইএসের নিয়মকানুনের মধ্যে প্রতিদিনকার যাপিত জীবনের বিষয়গুলো প্রকাশ করা হয়। কর্মী সংগ্রহের জন্যও টুইটারকে ব্যবহার করা হয়।

তবে শুধু টুইটার নয়, নতুন কর্মী সংগ্রহের ক্ষেত্রে আইএস জঙ্গিরা ‘কিক’ (Kik), ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ ও ‘স্কাইপ’-এর মতো স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর টুইটারকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করা হয় উগ্রবাদী মানুষদের এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য এবং তাদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।

তরুণ ও প্রযুক্তিপ্রেমী উগ্রবাদীরাই আইএসের প্রাথমিক পছন্দের তালিকায় থাকে। নতুন কর্মী সংগ্রহ থেকে হামলা চালানো এবং সেসব খবর ছড়িয়ে দিতে সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে থাকে তারা। অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী ও আধুনিক।

আইএসের এই প্রযুক্তিপ্রিয়তাকে ভয়ঙ্কর বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার। আইএস সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা চালিত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের মতো করে সন্ত্রাসবাদে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার আর কেউ কখনো করেনি। যেসব উগ্রপন্থী মানুষ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে আছেন, তাঁরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এই উগ্রপন্থার অংশ হয়ে যাচ্ছেন। ফলে উগ্রবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।’

আর এভাবেই আইএসের উগ্রবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন আইএস অধ্যুষিত এলাকায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে দেশ ছেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মানুষ।

গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিবিসিতে আইএসের অনলাইন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ডেকলান হার্ভে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাজ্য থেকে তরুণদের দলে ভেড়ানোর জন্য অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালায় ইসলামিক স্টেট।

উগ্রপন্থাবিরোধী সংগঠন ‘ইন্সপায়ারে’র পরিচালক সারা খান তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘সচরাচর যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি মানুষ সক্রিয় থাকে, সেসব প্ল্যাটফর্মেই জোর প্রচারণা চালিয়ে কর্মী ও সমর্থক সংগ্রহ করে আইএস। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অনলাইনেই আইএস সম্পর্কে জানতে পারে তিন ব্রিটিশ কিশোরী। লন্ডন থেকেই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং পরে আইএসে যোগ দিয়ে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমায়।

এ রকম কিছু ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। ২০ বছর বয়সী ব্রিটিশ তরুণী আকসা মাহমুদ আইএসের ‘জিহাদি ব্রিগেড’- এ যোগ দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। এর আগে থেকেই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্রপন্থার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। লন্ডন থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া ১৫ বছর বয়সী কিশোরী শামিমা বেগমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই যোগাযোগ রাখতেন আকসা। শামিমার সঙ্গে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমায় আরো দুই কিশোরী, ১৬ বছর বয়সী খাদিজা সুলতানা ও ১৫ বছর বয়সী আমিরা আবাসে।

সারা খান বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ইন্টারনেটে উগ্রপন্থী ওয়েবসাইটে ভরে গেছে এবং এসব ওয়েবসাইট ধর্মের নামে উগ্রবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, ‘আইএসের পক্ষ থেকে কিশোরী ও তরুণীদের নানাভাবে তাদের দলে যোগ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। প্রথমত, তাদের মধ্যে ধর্মীয় উপলব্ধি আনা হয় এবং তারপর আইএসের সুন্দর পরিবারে যোগদানের জন্য তাদের আহ্বান জানানো হয়। তাদের এটাও বলা হয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা আইএসে যোগ দিয়েছে। তাদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারলে এসব কিশোরী ও তরুণীদের ভালো লাগবে। তারা আইএসকে বড় ও সুখী একটি পরিবার হিসেবে এসব কিশোরী ও তরুণীদের কাছে উপস্থাপন করে। যেটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা।’

সারা খান আরো জানান, ‘অনেক ক্ষেত্রেই কিছু না বুঝেই আইএসের খপ্পরে পড়েন তরুণ-তরুণীরা। তাঁরা তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য ইন্টারনেটে সার্চ করেন। আর এখান থেকে তাঁরা যেসব ওয়েবসাইটে যান, তার অনেকগুলোই আইএসপন্থীরা পরিচালনা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামের নামে এদের দলে টানা হয় এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে এদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা হয়।’

সারা খান বিবিসিকে বলেন, ‘যেসব কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীর নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই অথবা ধর্মীয় বিশ্বাস খুব নড়বড়ে, তারাই দ্রুত আইএসের শিকারে পরিণত হয়। কারণ তারা সত্যিকারের ধর্মীয় অনুশাসন আর উগ্রপন্থার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই তারা উগ্রবাদীদের কথাকেই ধর্মীয় অনুশাসন হিসেবে মেনে নিয়ে উগ্রপন্থার দিকে পা বাড়ায়।’

সারা খানের মতে, ‘কিশোর ও তরুণদের সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে জোর দেওয়া উচিত, যাতে তারা ধর্মীয় অনুশাসন ও উগ্রপন্থার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। কারণ তাদের ধর্মের নামে খুন, সংঘর্ষ ও রক্তপাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাব থেকেই তারা প্রভাবিত হচ্ছে।’

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সারা খান বলেন, ‘আমি এমন কয়েকজন কিশোরীর কথা জানি যাদের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর তারা বোধ করতে থাকে তাদের জীবনটা অর্থহীন ও শূন্য হয়ে গেছে। সেই ধারণা থেকেই তারা কিছু করতে চায়, যেটা তাদের প্রশান্তি দেবে। তাদের এই কিছু করার তাগিদটাই পূরণ করে উগ্রবাদীরা। আর ধীরে ধীরে তারা হয়ে ওঠে উগ্রবাদী। তারা এসব অসুখী কিশোর-কিশোরীদের আহ্বান জানায়, এসো আমরা তোমাদের সুখ ও শান্তি দেব। মানসিক ও পারিবারিক জায়গা থেকে দুর্বল এসব কিশোর-কিশোরীরা খুব সহজেই এসব প্রলোভনে সাড়া দেয়।’

সারা খান জানান, ‘বিভিন্ন উগ্রবাদীর ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হলেও সেটা আদতে কাজে আসছে না। কারণ যে হারে বন্ধ করা হচ্ছে সে হারেই নতুন করে আরো এ ধরনের উগ্রবাদী ওয়েবসাইট ও অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে।’

গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ভয়েস অব আমেরিকার স্টুডিওতে এক আলোচনায় অংশ নেন একদল গবেষক। ভয়েস অব আমেরিকা ও দ্য নিউজিয়ামের যৌথ উদ্যোগে ‘আইএসআইএস অ্যান্ড দ্য ডিজিটাল ওয়ার’ নামের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অন এক্সট্রিমিজম অ্যাট দ্য সেন্টার ফর সাইবার অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক লরেঞ্জো ভিদিনো, ভয়েস অব আমেরিকার সোমালি নিউজ সার্ভিসের সিনিয়র এডিটর হারুন মারুফ, নিউজিয়ামের প্রধান নির্বাহী জেনে পোলিসিনস্কি, দ্য ডেইলি বিস্টের সিনিয়র এডিটর মাইকেল ওয়িস, আমার ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এমা নিকলসন।

লরেঞ্জো ভিদিনো তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘পূর্বসূরি আল-কায়েদার থেকে আলাদাভাবে কাজ করে ইসলামিক স্টেট। আল-কায়েদার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাদের প্রচারণা চালাতেন। আর আইএস তাদের প্রচারণা চালায় সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কব্জা করেছে এবং অত্যন্ত সুচতুরভাবে নিজেদের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

ভয়েস অব আমেরিকার সোমালি নিউজ সার্ভিসের সিনিয়র এডিটর হারুন মারুফ বলেন, ‘আইএসের মতো এত সুনিপুণভাবে আর কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারেনি। অনলাইনে ওরা সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলে। কয়েক মাসের মধ্যেই এরা সদস্য সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।’

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও উগ্রবাদ নিয়ে গবেষণা করেন লরেঞ্জো ভিদিনো। তিনি বলেন, ‘আইএস খুব কার্যকরভাবে অনলাইনে তাদের মতবাদ বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের তারা আকৃষ্ট করতে পেরেছে।’

নিউজিয়ামের প্রধান নির্বাহী জেনে পোলিসিনস্কি বলেন, ‘তরুণরা সবাই এখন ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর। তাদের বন্ধুরাও সব সেখানে। আর এখান থেকেই ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদের জাল ছড়িয়ে দিয়েছে আইএসের উগ্রপন্থীরা।’

দ্য ডেইলি বিস্টের সিনিয়র এডিটর মাইকেল ওয়িস বলেন, ‘তরুণদের কাছে ধর্মের নামে এই প্রচারণা খুবই আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তারা এতে আকৃষ্ট হয়।’ সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি ও জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন মাইকেল।

ইরাকভিত্তিক ‘আমার ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনে’র চেয়ারপারসন এমা নিকলসন বলেন, ‘এরা হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করলেও ইসলাম সম্পর্কে কিছুই এরা জানে না। ইসলামিক স্টেট এর হামলায় ইরাকে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।’

ভিদিনো বলেন, ‘আইএস ধর্ম সম্পর্কে জানার আহ্বান জানিয়ে নতুন সদস্যদের দলে টানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা আইএসের এসব প্রোপাগান্ডার ফাঁদে পা দেন তাদের কারোরই ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা বা জ্ঞান নেই। তাই খুব সহজেই আইএস তাদের প্রভাবিত করে ফেলে।’

মারুফ এবং নিকলসন উভয়েই আইএসের খপ্পর থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষার জন্য পরিবারের যোগাযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তাদের উভয়েরই মত, কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীদের তাদের পরিবার থেকেই দেখভালো করা উচিত। তাদের আচরণে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে সেটাকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। পরিবার এবং সমাজে এই সচেতনতা খুব প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর