সউদী আরবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ সংবর্ধনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বিদেশ সফরে সউদী আরব পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানী রিয়াদে পৌঁছানোর পর ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়াকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় তাদেরকে স্বাগত জানান সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ।
সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্প সউদী বাদশাহ সালমানসহ দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া ৫০টির বেশি মুসলিম দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে ‘আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও ইসলাম সম্পর্কে ভাষণ দেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মেলনে যোগদানের জন্য গতকাল রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাবেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনাপূর্ণ নানা ঘটনাবলী নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা চলার মধ্যেই তিনি এ সফরে গেলেন। সউদী বাদশাহ সালমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ট্রাম্প তেল সমৃদ্ধ এ দেশে পৌঁছালে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়। সউদী আরবের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘কিং আব্দুল আজিজ মেডেল’ পান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রিয়াদের আল ইয়ামায়াহ প্যালেসে সউদী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ ট্রাম্পকে এ সম্মাননায় ভূষিত করেন।
স্থানীয় সময় গতকাল দুপুরে সস্ত্রীক ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানটি সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছায়। ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে সউদী বাদশাহ বলেন, এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিত আরও জোরদার হবে। আট দিনের এ বিদেশ সফরে ট্রাম্প সউদী আরব ছাড়াও ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, বেলজিয়াম, ভ্যাটিকান এবং ইতালি যাবেন। এ সফরে তার সফরসঙ্গী হসেবে রয়েছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। সাবেক এফবিআই পরিচালকের বরখাস্ত হওয়া এবং রুশ সংযোগের তদন্ত নিয়ে যখন মার্কিন রাজনীতি উত্তাল, তখনই প্রথম বিদেশ সফরে গেলেন ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলা, ইয়েমেনে সউদী আগ্রাসন, ফিলিস্তিনে শান্তি আলোচনাসহ আঞ্চলিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় সউদী আরবের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে। এ সফরে ট্রাম্প তিন একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলাম, ইহুদিবাদ ও খ্রিস্টবাদের পূণ্যভূমি জেরুজালেম সফর করবেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প রিয়াদে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা আগে সউদী কর্তৃপক্ষ ইয়েমেনের রাজধানী সানার কাছে বিমান হামলা চালিয়েছে। সউদী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, সানা থেকে হুথি বিদ্রোহীরা রকেট ছুড়েছিল। বৃহস্পতিবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ট্রাম্প ব্রাসেলস সফরে যাবেন। পরে সিসিলিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেবেন তিনি।
১৫০ ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার বিক্রির চুক্তি
সউদী আরবের সঙ্গে বড় ধরনের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সউদী আরব পৌঁছার পর এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গতকাল স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৫০টি অত্যাধুনিক বø্যাকহক হেলিকপ্টার কিনবে সউদী আরব। সউদী আরবের এক সরকারি বিবৃতিতে অস্ত্র চুক্তির বিষয়টি জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লকহিড মার্টিন বø্যাকহক নামের এসব হেলিকপ্টার কিনতে সউদী আরবের ব্যয় হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৬০০ কোটি)।
এসব ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার ক্রয়ের ফলে সউদী আরবে ৪৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের সফরের আগেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছিল, সউদী আরবের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির বিভিন্ন চুক্তি হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সফরে একাধিক অস্ত্র বিক্রির চুক্তির জন্য ওয়াশিংটন সউদী আরবের ওপর চাপ দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে ট্রাম্পের সফরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, এই অস্ত্র চুক্তি এক দশকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এসব অস্ত্র দিয়ে সউদী আরব নিজেদের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করবে।
উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলের শেষ দিকে সউদী আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি কমিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনে সউদী অভিযানে বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর কারণে সমালোচনার মুখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওবামা প্রশাসন।
সউদী আরবের অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে শীর্ষ দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। স¤প্রতি সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম কিনেছে। যার আর্থিক মূল্য ছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্পকে আরবের ঐতিহ্য শেখালেন সউদী বাদশা
প্রথম বিদেশ সফরে গতকাল সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিয়াদ বিমানবন্দরে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি পৌঁছার পর তাদের অভ্যর্থনা জানান সউদী বাদশা সালমান। তারপর বিমানবন্দরেই সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন দুই রাষ্ট্র নেতা। বৈঠকে ট্রাম্পকে একটি সউদী ঐতিহ্য শিখিয়ে দেন সউদী বাদশা। আল আরাবিয়া টেলিভিশনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সংক্ষিপ্ত বৈঠকে দুই রাষ্ট্র নেতা চা পান করেন। চা পান শেষ হয়ে গেলে ট্রাম্প হাতে কাপ নিয়ে বসে থাকেন। ট্রাম্পের অবস্থা দেখে সউদী বাদশা তাকে শিখিয়ে দেন চা পান শেষ হয়ে গেলে কী করতে হয়। সউদী বাদশা শিখিয়ে দেওয়ার পর ট্রাম্প তাকে অনুসরণ করেন।
সউদী আরবের রাজকীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, চা পান শেষ হয়ে গেলে কাপ নিয়ে যাওয়ার জন্য কাপটি হাতে নিয়ে নাড়তে হয় বা রাখার জায়গা খুঁজতে হয়। তা দেখে কোনও ভৃত্য এসে কাপ নিয়ে যায়।
দুই দিনের সফরে সউদী আরব এসেছেন ট্রাম্প। নিজ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও পরিবারের সদস্যরাও যুক্ত হয়েছেন ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে। গতকাল সউদী বিমানবন্দরে ট্রাম্পের সঙ্গে স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং কন্যা ইভানকা ট্রাম্পকেও দেখা গেছে। সঙ্গে ছিলেন ইভানকা’র স্বামী জারেড কুশনারও। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে ইভানকা ট্রাম্পের উপস্থিতি অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগে জাপানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে অংশ নেন ইভানকা ট্রাম্প। তখনও অবশ্য বাবার প্রশাসনে তার কোনও দায়িত্ব ছিল না। ফলে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি সমালোচনার জন্ম দেয়। এক পর্যায়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইং-এ ইভানকা ট্রাম্পকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ওয়েস্ট উইং’কে মার্কিন সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান ইভানকা’র স্বামী জারেড কুশনার। সূত্র : রয়টার্স, আল-আরাবিয়া।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর