শূণ্যপদে নিয়োগ পাচ্ছেন প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক

সারাদেশে বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার। কিন্তু, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদ রয়েছে সেখানে পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে বিস্তর।

এই অভিযোগ এড়াতে সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচির অধীনে নতুন নিয়মে সারাদেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ১৪ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষক।

শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে প্রথমবারের মতো এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। আগামী রবিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করবেন।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে প্রথম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শুরু হয়। এরপরে একে একে ১২টি পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ।১ম থেকে ১২ তম পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হন পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৩ জন প্রার্থী।

এর মধ্যে পূর্বের নিয়মে চাকরি পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৩২২ জন। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে শূন্য পদের জন্য আবেদন পড়েছে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার।

এর মধ্যে চাকরিতে এবার সুপারিশ করা হচ্ছে ১৪ হাজার ৭৪৩ জন প্রার্থীকে। উত্তীর্ণ বাকি ৪ লাখ ৩৮ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করবেন।

নিয়োগ নীতিমালা থেকে জানা গেছে, উত্তীর্ণদের সনদের মেয়াদ থাকে ২ বছর। এই দুই বছরের মধ্যে প্রার্থী কোথাও যদি নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত না হন তাহলে ওই প্রার্থীকে আবারও নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে নতুন করে নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রতিবছর শূন্য পদ ও শিক্ষক চাহিদার ভিত্তিতে ক্রমান্নয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএ এর এক কর্মকর্তা জানান, একের পর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হচ্ছে। আর জাতীয়করণ হলে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা আরও সংকটে পড়বেন। আগামী দুই বছরে অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রত্যার্শীদের সবাই চাকরি পাবেন কিনা এ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, এর আগে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এনটিআরসিএ আয়োজন করে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগ চূড়ান্ত করতো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে বলে নানা অভিযোগ পায় মন্ত্রণালয়।

পরে নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে গত বছর ৩০ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ-কেই মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই নীতিমালায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষক চাহিদা পাঠাবে এনটিআরসিএতে। সেখান থেকে নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হবে প্রতিষ্ঠানে। সে তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি এখন শুধু ওই শিক্ষকের নিয়োগপত্র ইস্যু করবেন মাত্র। স্বয়ংক্রিয় সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজ এলাকায় নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবেন। এনটিআরসিএ প্রতি বছর প্রার্থী বাছাইসংক্রান্ত পরীক্ষা গ্রহণ করে চাহিদা অনুযায়ী পদ/বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের জাতীয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা বা থানাওয়ারি মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফলাফল ঘোষণা করবে।

এ ব্যাপারে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এ এম এম আজাহার বলেন, আগামী রবিবার শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করবেন। তিনি এ সময় বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আগামী তিন বছরের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ সারাদেশে ৩১ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে এ বছর যে সংখ্যক পদ শূন্য হয়েছে সেগুলোতেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে উত্তীর্ণ সবাইকে নিয়োগ দেওয়া আসলেই কঠিন’।-কালেরকন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর