রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে কেউ কথা বলছে না: আইনমন্ত্রী

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধন চলছে, তাদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে, কিন্তু এ ব্যাপারে বিশ্ববাসী কোনো কথা বলছে না-এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, সমুদ্র সৈকতে আইনাল কুর্দির মরদেহ পাওয়া যাওয়ার পর সবাই কথা বলেছিলেন, কিন্তু মিয়ানমারের এই নির্যাতন নিয়ে কেউ কথা বলছে না। মিয়ানমারে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। আমাদের ছোট দেশ এখানে তাদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়, তারপরও ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গা আমাদের দেশে নিবন্ধিত আছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা দুই লাখেরও ওপরে। তারা শরণার্থী হিসেবে আছে আমাদের দেশে। রোহিঙ্গা সবাইকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকার কখনোই প্রশ্রয় দেবে না জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা। যেখানেই ব্যত্যয় ঘটবে সেখানেই সরকার কঠোরহস্তে ব্যবস্থা নেবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন আইনমন্ত্রী হলাম তখন আমার কাছে ২৪১টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তালিকা দেয়া হলো। তালিকার মধ্যে দুই জেলায় ২৫ জন করে ৫০ জনের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু তদন্ত করে দেখা গেল দুই জেলায় মাত্র দুইজনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকার সমর্থন করে না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডই সরকার মেনে নেবে না। এই রকম কোনো ঘটনা সরকারের নজরে এলেই তা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখতেই কাজ করে যাচ্ছি।’

বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ১৮ বছরের নিচেও বিয়ে দেয়া যাবে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘১৮ বছরের নিচে কন্যা ও ২১ বছরের নিচে ছেলের বিয়ে দেয়া যাবে না এটাই মূলকথা। একটা আইন ভালো হয় তখনই যখন সব ব্যাপার সেই আইনে থাকে। সমস্যা সমাধানের জন্য সব ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের দেশে বাস্তবতার নিরিখে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিয়ে দেয়া যাবে। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশেষ ব্যবস্থায় মা-বাবা আদালতের সম্মতি নিয়ে বিয়ে দিতে পারবেন। এই বিশেষ ব্যবস্থা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। একটা শক্তিশালী আইনের জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

আমাদের সংবিধানের চেয়ে মানবতাবান্ধব সংবিধান বিশ্বে কম আছে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংবিধান জনগণের ক্ষমতার কথা বলে। সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে মানবাধিকারের কথা বলা আছে।’ এসময় তিনি বলেন, ‘৭৫’র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান নিয়ে ২১ বছর ফুটবলের মতো খেলা হয়েছে।’

আইসিটি অ্যাক্ট নতুনভাবে করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৬ সালে এই আইনটি করা হয়। ২০১৩ সালে আইনটি ৫৭ ধারায় যুক্ত করা হয়। এই ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সেক্ষেত্রে এই আইনে যাতে ভায়োলেন্স না হয়, সেভাবেই আইনটি নতুনভাবে করা হচ্ছে।’

ধর্ষণ মামলায় আসামি খালাস পাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কোর্ট কাউকে তখনই খালাস দেয় যখন সাক্ষী-প্রমাণ থাকে না। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনকে এই সমস্ত মামলা গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলা হচ্ছে। পরিবার এবং ভিকটিমের সাক্ষী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সিরিয়াস না হলে এই সমস্ত মামলায় আসামিকে সাজা দেয়া কঠিন হয়ে যায়। অন্যান্য প্রলোভনে তারা যেন সাক্ষী দেয়া থেকে বিরত না থাকে সেই বিষয়টি তাদের দেখতে হবে।’

সেমিনারে কী-নোট উপস্থাপনের সময় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম বলেন, অন্যের বক্তব্য অন্যের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনতে হবে। পৃথিবীর কোনো ডকুমেন্ট নাই যা বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকার সম্পর্কে আছে। যদি কেউ কোর্টে না যেতে পারে তার প্রতিনিধি হিসেবে যেকোনো সোস্যাল অরগানাইজেশনকে কোর্ট গ্রান্ড করে। এখানেও মানবাধিকার সমুন্নত হয়েছে।

বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে নিয়োগ দিতে হবে জানিয়ে আমির উল ইসলাম বলেন, ‘মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বিচারকদের ভূমিকা অপরিসীম। সেই স্টান্ডার্ড কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি। সেরকম বিচারক নিয়োগ না দিলে বিচার সেভাবে আমরা পাবো না। এটা নিশ্চিত করতে না পারলে মানবাধিকার সমুন্নত করা যাবে না।’

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, মানবাধিকার কমিশনের সচিব হিরন্ময় বাড়ৈ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর