রাত আমার আকর্ষণ অপার রহস্য

পীর হাবিবুর রহমান (ফেসবুক স্ট্যাটাস):

রাত আমার কাছে অপার রহস্যময় ও আকর্ষণের। আজ প্রবা পূর্নিমার চাঁদ আকাশ জুড়ে কি সুন্দর, আমায় ইশারায় ব্যাকুল করে ডাকে জলের কাছে! দিন হলো টেনশনের, দৌড়ঝাপ কাজের। রাত যত বাড়ে কি এক জাদুর মতোন আমাকে টানে। পৃথিবীর তাবৎ মানুষ ঘুমিয়ে যেন পড়ে। নগর,শহর, গ্রাম ঘুমিয়ে পড়ে!আমি জেগে থাকি। রাতের আড্ডা, নির্জনতা, রাতের উৎসব আমার মধুর লাগে। একাকিত্ব ও বিরহবোধ এমনকি ভাবনার যত দুয়ার খুলে দিনে তার কিছুই মনে পরে না। দিন হলো দায়িত্ব, কাজের চাপ। রাত হলো ভাবুক মন নিয়ে ঘুমন্ত পৃথিবীকে নিয়ে জেগে থাকার। স্কুল জীবনে মাগরিবের পরেই বাইরে থাকার নিষিদ্ধ পারিবারিক নিয়ম মানতে গিয়েই আমার রাতের প্রতি আকর্ষণ তীব্র হয়। কলেজে পা দিতে না দিতেই স্বাধীনতার দুয়ার খুলে। রাতে বাড়ি ফেরা। কত রাত কখনো বৃষ্টিতে কখনোবা জোছনায় ভিজতে ভিজতে ঘরে ফেরা। কত বকুনি খেয়েছি। কত তিরস্কৃত হয়েছি পরিবারে। ছাত্ররাজনীতির সুবাদে শহরের পথে পথে বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে বেড়ানো। কত বালিকা তরুণী কবিতা ও মজার মজার ঘটনা হিউমার হাসিতে মজে থাকার রাত। ঘরে ফিরে পাঠ্য বই, উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজ, আরো কত গোপন নথি! আহ। বাসার রাস্তা তখন গলিপথ। দুপাশে ঝোপ। বৃষ্টির রাতে একা ঘরে ফিরতে হাঁটবার সময় মনে হতো পিছনে কে জানি হাটছে। তাকালেই নাই! গা ছম ছম করে উঠতো।ক লেজের পুকুর পাড়, নদী, লঞ্চঘাটের ডিম পরোটা চা! কি সূখ। আহা রাতের আড্ডা কি আনন্দের উকিলপাড়া!
মতিহার ক্যাম্পাসে ঢুকতেই অবাধ স্বাধীনতা! একটা দ্বিতীয় শ্রেনী দেয়া যেন স্যারদের দায়িত্ব। প্রথমদিকে রাতের শহীদ মিনার। ক্যাম্পসের শেষ রাত পর্যন্ত গভীর রাতে রেল ইস্টিশনে রহিমের চায়ের দোকানে জম্পেস আড্ডা। দিনের আবুর ক্যান্টিন, বাবলাতলা, সন্ধার পশিচমপাড়া হয়ে রিক্সায় মতিহার ঘুরে ফেরা! কি সূখ আর সূখ। বিকেলের রাকসু ভবন গড়িয়ে সন্ধার আবুর ক্যান্টিন আর হলে হলে আড্ডা দিয়ে রাতের সুনসান নীরবতায় যখন টেবিলে বসতাম! পাশেই সাদাকালো মেরিলিন মনরো, দখিনা জানলার বাইরে ঝোপঝারে জোনাক জ্বলে, মুগ্ধ হয়ে থাকিয়ে থাকতাম। হঠাৎ ট্রেনের হুইসেল, বাসের হর্নে রাতের নিরবতা খান খান হলেই ,আমার বুকের ভিতর বাড়ির জন্য হু হু কান্নার আওয়াজ মন উদাস করে দিতো। বাড়ি আসা যাওয়ার পথে ঢাকায় রাতের আড্ডায় শাফকাতের বাসায় গনশয্যা নিতে নিতে ভোর!
ঢাকায় আসার পর আড্ডায় রাত একাকার। সেলিমের ভূতের গলি, আমাদের জিগাতলা তারপরও কত রাত সংসার বিবাগী হয়ে রাত নামলেই বেড়িয়ে পরা। গাও খাও আর আড্ডা দাও। দৈনিক বাংলার মোড়ে গভীর রাতে ডিম পরোটা, কাওরান বাজারে রাজ্জাকের বিশেষ আথতিথেয়তা, আহ ডাক্তার সাঈদের মতোন পিছ পৃথিবীর কোন আড্ডার আসরে মিলে না!!
এখনো আমি রাত জাগি! কেন? ইনসমনিয়ার চেয়েও আমার লোভ। আমার আকর্ষণ।পড়া,গান শোনা,লেখা। আকাশ দেখা, ভাবতে ভাবতে নস্টালজিক হওয়া। রোমান্টিক মন জাগিয়ে তারুন্য পাওয়া, আহ আমার রাত প্রেমিকার চুলের মতোন, আঁড়চোখের চাহনির মতোন,লাজুক হাসির মতোন বড় বেশি প্রিয়, বড় বেশি গভীর মুগ্ধ রহস্যময়। এত রাত জাগি, তবু আমার নেশা ফুরায়না। যত দেশ যাই রাতের এয়ারপোর্ট কত সুন্দর! প্রতিটি রাতের নগরী নর্তকীর মতোন নাচে! দিনে ঘুমাই আমি রাতভর ঘুরি!রাত যত গভীর হয় তত ভালো লাগে, তত মুগ্ধ হই, কোন এক হুরপরীর নেশায় আমি তনদ্রাচ্ছন্ন হই, আমি স্বপ্ন দেখি, ভাবি রাত নামলেই আহ! বাঁচি, সবাই বাচুক, কালকের সকালটা দেখি। রাতের শেষ প্রহরে কবি গুরুর শেষের কবিতা পাঠ করে যায় কে?কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও! হে বন্ধু বিদায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর