রাজনীতিবিদদের ‘লেট ম্যারেজ’

৬৫ বছর বয়সে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে গিয়ে আলোচনায় এলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। যদিও রাজনীতিবিদদের বিলম্বিত বিয়ে বা লেট ম্যারেজ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতা-উত্তর ও স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলার ইতিহাসে ডাকসাঁইটে এবং জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেরিতে বিয়ে করা বা দ্বিতীয় বিয়ের উদাহরণ অসংখ্য। কেউ কেউ আবার দেশের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে বিয়ে বা সংসার ধর্মকে বাদ দিয়ে চিরকুমার হিসেবেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।
দেশের প্রবীণ কয়েকজন রাজনীতিবিদ কথপোকথনে জানান, তাদের পরিচিত রাজনীতিবিদদের বিয়ের নানা খোঁজখবর।
আসছে ২১ আগস্ট জিয়াউদ্দিন বাবলু দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে যাচ্ছেন অপর সংসদ সদস্য মেরিনা ইয়াসমিনের মেয়ে এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগ্নি মেহেরুজেবুনেছাকে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ২০০০ সালে আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন, দুই বছর আগে বিদিশা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাদের এরিক এরশাদ নামে একটি ছেলে আছে। পুত্রের প্রথম জন্মদিনে বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আনেন তিনি। বিদিশার সঙ্গে বিয়ের সময় এরশাদের বয়স ছিল ৬৮।
২০০৪ সালে এরশাদ-বিদিশার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরশাদ বিদিশার বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেন। এরশাদ ও বিদিশার বিয়ে ও বিচ্ছেদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ কয়েক বছর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেরিতে বা দ্বিতীয় বিয়ে করার তালিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল। ৮০ দশকে ৫৫ বছর বয়সে নওগাঁও পৌর চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির যুব সংগঠন যুব ইউনিয়নের স্থানীয় এক নেতার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধতে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৮ সালে ৬৫ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ডাকসাঁইটে নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ। যদিও ওই বিয়ে খুব বেশি দিন টেকেনি।
২০১৪ সালে আড়ম্বরে বিয়ে করেছিলেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ দম্পতি এখন তাদের এক মেয়েকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং ৬৯ এর নেতাদের মধ্যে তোফায়েল আহমদ একটু আগেভাগে বিয়ে করলেও তুলনামূলক দেরিতে অর্থাৎ সে সময়ের অনুপাতে বয়স ৩০ এর ঘর পেরিয়ে বিয়ে করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। যথাসময়েই বিয়ে করেছিলেন আমির হোসেন আমু।
স্বাধীনতা উত্তর এবং পরবর্তী চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী একাধিক বিয়ে করেছিলেন। তার ছিল ২২ সন্তান।
সে সময়ের আলোচিত বামপন্থী নেতাদের বেশ কয়েকজন দেরিতে বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে সদ্য প্রয়াত অজয় রায় স্বাধীনতার পর ৪০ বছর বয়স অতিক্রান্ত করে বিয়ে করেছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচিত বাম নেতা সুকুমার ভাওয়াল বিয়ে করেছিলেন ৬০ বছর বয়সে। আবার চিরকুমার রয়ে গেছেন রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ বলে পরিচিত সিরাজুল আলম খান। নিজের বয়সের তুলনায় দেরিতে বিয়ে করেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মাণিক।
সাবেক বামপন্থী নেতা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন আলাপচারিতায় বলেন, ‘গড়পরতা রাজনীতিবিদরা দেরিতে বা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এমনটা ঠিক না। এক সময় স্বদেশি আন্দোলনের সময় নেতারা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পালিয়ে বা বনে বাঁদাড়ে থাকতে গিয়ে বিয়ের সুযোগ পেতেন না।’ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বিয়ের খবরে স্বাগত জানান লেনিন।
৬০ এর দশক থেকে রাজনীতিতে না থাকলেও রাজনীতির ঘনিষ্ঠমহলে থাকা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দরকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তাদের বন্ধু মহলে রাজনীতির মাঠে অবিবাহিত বা পরবর্তীতে বিবাহিত কোনো রাজনীতিবিদের নাম মনে পড়ছে না।’
তবে তিনি বলেন, ‘জিয়াউদ্দিন বাবলুর যেহেতু আগের স্ত্রী মারা গেছেন তাই তার বয়স যাই হোক দ্বিতীয় বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর