মেয়র হানিফের জীবন থেকে শিক্ষা নিন: ওবায়দুল কাদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেয়র হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  কাছের মানুষ। তিনি কমিটমেন্ট রাজনীতি করতেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। তার পরিবারও বঙ্গবন্ধুর জন্য অনেক করেছেন।

আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত মেয়র হানিফের মৃত্যুবাষির্কীর স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। তিনি (মেয়র হানিফ)আমাকে বাব বার ফোন করেছেন। আমি অবাক হই, তিনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। কিন্তু ভুলে কোনোদিন তুমি বলেননি। এ কারণেই তিনি বড় হয়েছিলেন। কারণ যার বিনয় যত বেশি তিনি তত বড় হন।’

মেয়র হানিফের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ তার কথা বাব বার মনে পড়ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় তিনি মানবঢাল বানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার জন্য তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। আজ তো নেতার অভাব নেই। আতি নেতা, পাতি নেতা, কত নেতা। প্রয়াত মেয়র হানিফের মতো নেতার আজ বড় দরকার বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নগর ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। এসময় সিটি করপোরেশন এবং নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আজিমপুর কবর স্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রক্তদান কর্মসূচি, দোয়া ও মিলাদ-মাহফিল, স্মরণ সভা ও দুই সপ্তাহব্যাপী মেয়র হানিফ স্বাস্থ্য সেবা (বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান) কার্যক্রমও চলছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ হানিফ। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে ৬২ বছর বয়সে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মোহাম্মদ হানিফ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পান। এসময় ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া ঢাকা ১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৬ সালে তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ এর মার্চের শেষ সপ্তাহে স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে মোহাম্মদ হানিফ তার বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে ‘জনতার মঞ্চ’ তৈরি করেন, যা তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করে এবং যার ফলশ্রুতিতে ’৯৬-এর ১২ জুন দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে এবং মোহাম্মদ হানিফের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের ট্রাক মঞ্চে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ হানিফ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও স্প্লিন্টারের আঘাতে মারাত্মক আহত হন তিনি। মস্তিস্কসহ দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য স্প্লিন্টার ঢুকে পড়ে। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গণে এক সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় মেয়র হানিফ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মাথায় বিদ্ধ স্প্লিন্টার প্রতিক্রিয়া পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী শোক বাণী দিয়েছেন। তার একমাত্র পুত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর