মাল্টা চাষ; নতুন স্বপ্ন দেখছে চুয়াডাঙ্গার চাষিরা

মাল্টায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান যা মানুষের পুষ্টিহীনতা দুর করতে সহায়তা করে। যখন প্রচলিত ফসল চাষাবাদ করে লোকসান দিতে দিতে চাষিরা হতাশ হতে শুরু করেছে ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলায় লাভজনক নতুন ফল বারি-১ জাতের মাল্টা আবাদে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। মাল্টা গাছের চারা অন্যান্য চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে চারা উৎপাদন করছে তারা। এই মাল্টা চাষকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে চুয়াডাঙ্গার চাষিরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যা মুক্ত দো-আঁশ মাটি মাল্টা আবাদের জন্য উপযোগী। বারি-১ জাতের মাল্টা বর্তমানে চাষিরা তাদের জমিতে রোপণ করেছেন। বছরের মে থেকে জুলাই মাসে মাল্টা গাছ রোপণের সময়। প্রতি বিঘা জমিতে ১৪৫টি মাল্টা গাছের চারা লাগাতে হয়। জীবননগর উপজেলায় ৯টি প্রদর্শনী মাঠে ৩ বিঘা সাড়ে ১২ শতক জমিতে মাল্টা গাছ রোপণ করা হয়েছে। যে সকল মাল্টা গাছ আগে রোপণ করা হয়েছে সে সব গাছে ৪৫-৫০টি করে খাবার উপযোগী মাল্টা গাছে ধরেছে। মাল্টা পরিপূর্ণভাবে পাকা শুরু এবং সেগুলিতে হলুদ রঙ ধরছে। কয়েক দিনের মধ্যে ওগুলো খাওয়ার উপযোগী হবে।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের মরহুম খাইরুল হকের ছেলে রোকনুজ্জামান পান্নু এবারই নতুন মাল্টার আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আবাদের ইচ্ছা থাকলেও মাল্টা গাছ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ী থেকে তিনি মাল্টা গাছের চারা সংগ্রহ করেন। এছাড়া জীবননগর কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তিনি ৩ বিঘা জমিতে ৩০০ মাল্টার চারা রোপণ করেছেন। নতুন মাল্টার আবাদ করতে পেরে তিনি খুশি। লাভজনক মাল্টার আবাদ আরো চাষিরা করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পুরাতন বারান্দী গ্রামের আনসার আলী মির্জার ছেলে আজাবুল সাড়ে ১২ শতক জমিতে ৫০টি মাল্টা গাছ রোপণ করেন। এ গাছ গুলোতে ভাল মাল্টা হয়েছে। সে গুলো খাবার উপযোগীও হয়ে গেছে। রোপণ করা গাছে ভাল মাল্টা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নতুন ফল মাল্টা আবাদ প্রসঙ্গে বলেন, তৃতীয় শস্য বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় বারান্দী গ্রামে মাল্টার প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়। এ প্লটে সাড়ে ১২ শতক জমিতে ৫০টি মাল্টা গাছ রোপণ করা হয়। এ প্লটের মাল্টা গাছে ভাল ফল হয়েছে। মাল্টা এ জেলায় নতুন ফল, সে কারণে এর চাষ আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। জীবননগরে আম এবং লিচু বাগান ছাড়াও মাল্টার বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু এ উপজেলায় এ আবাদের উপযোগিতা আছে সে কারণে মাল্টা চাষ বৃদ্ধি পাবে।
চুয়াডাঙ্গার মাল্টা আবাদ থেমে নেই। দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর বেড়বাড়ি গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাল্টা বাগান করেছে ভগিরথপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তার মাল্টা বাগানে প্রায় ১০লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেলেও গাছে কোন ফল আসেনি। তবে আগামীতে ফল আসলে লাভবান হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এ বাগানে ৩০০০ হাজারের ওপরে মাল্টা গাছ আছে বলে তিনি জানান। মাল্টা আবাদ করতে গিয়ে প্রথমেই তিনি হোঁচট খান। ওই গাছের

চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি পড়েন বিপাকে। সরকার কর্তৃক সরবরাহ করা বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ তিনি রোপণ করেছেন। কিন্তু তাকে একজন গাছের চারা ব্যবসায়ী ভুল তথ্য দেয় যে, বারি-৩ জাতের মাল্টা গাছের চারা তার কাছে আছে। প্রথমে ভাল ফলের আশায় তিনি ওই চারা ব্যবসায়ীর কথা শুনে তার কাছ থেকে অনেক টাকার চারা কিনে সেগুলো তিনি জমিতে বপন করেন। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে, বারি-৩ জাতের কোন মাল্টা গাছের চারা এখনও সরকারিভাবে উৎপাদিত হয়নি। যে গুলো তিনি রোপণ করেছেন সে গুলো সাধারণ লেবু গাছ। এরপর তিনি সে গাছ কেটে পরিষ্কার করে সেখানে বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ রোপণ করেন। এর ফলে তিনি আবাদে পিছিয়ে পড়েন। তবে বর্তমানে তার রোপণ করা বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ গুলিতে ফল আসলে ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েত ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এই মাল্টা বাগানে লিচু গাছ ২৫০টি ও ৬০০টি আম গাছ আছে। বাগানে নতুন ফল মাল্টা গতবার তেমন ধরেনি। তবে এবার ভাল মাল্টা ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে বাগানে কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। মাল্টা আবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান এবং স্বাবলম্বী হবে। অল্প জায়গায় লেবু জাতীয় ফল হওয়ায় এ চাষ দামুড়হুদা উপজেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এ বাগান থেকে মাল্টা চারা উৎপাদনও করা হচ্ছে। যা দেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

সঠিক পরিচর্যা আর পরিকল্পিতভাবে মাল্টা আবাদ চাষিদের আরো আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলবে এমনটিই প্রত্যাশা করছে চুয়াডাঙ্গার কৃষি বিভাগ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর