‘ভাইট্টা গাবর’ বলার দিন শেষ: রাষ্ট্রপতি

হাওরাঞ্চলের মানুষদেরকে এক সময় অনেকেই ‘ভাইট্টা গাবর’ বলে তাচ্ছিল্য করতো। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি জানান, শিক্ষা-দীক্ষা ও উন্নয়নে ভাটি বাংলার মানুষেরা এখন অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জের ইটনায় এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। উপজেলা সদরে অবস্থিত ‘সরকারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কলেজের’ ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্ত্রীর্ণ এলাকাজুড়ে হাওরের অবস্থান। এসব অঞ্চলের মানুষেরা বরাবরই শিক্ষা-দীক্ষা ও উন্নয়নে পিছিয়ে ছিলেন। তবে সম্প্রতি হাওরাঞ্চলের রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এই উন্নয়নকাজ শেষ হলে ভাটি বাংলার চিত্র পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিকূল পরিবেশে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা ভাটি বাংলার মানুষেরা ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামী হয়ে ওঠেন। দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এই ভাটি বাংলার মানুষ। ‘ভাটির শার্দুল’ হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে আছেন আষ্টেপৃষ্ঠে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তিনি প্রায়ই নিজ এলাকায় যান এবং নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন।

রাষ্ট্রপতি রবিবার চার দিনের সফরে নিজ এলাকায় এসেছেন। তিনি গতকাল এক সমাবেশে জানিয়েছেন, আল্লাহ হায়াত দিলে তিনি শেষ বয়সে আবার হাওরে ফিরে আসবেন। বঙ্গভবনে থাকলেও এলাকায় মন পড়ে থাকে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।

নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ভৈরব ও উজানের লোকজন এক সময় আমাদেরকে ‘ভাইট্ট গাবর’ ও ‘উত্তরের ভূত’ কইয়া অবজ্ঞা করতো। সেদিন এখন আর নেই। আমরা এখন লেখাপড়া, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগে তাদের চেয়ে কোনো অংশে কম না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকেও ছাড়িয়ে গেছি।’

আবদুল হামিদ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘আমি এখানে বড় হয়েছি এবং আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাওরের জনগণের সঙ্গে কাটিয়েছি। বঙ্গভবনে থাকলেও আমি সবসময় হাওরের পরিবেশ অনুভব করি।’

হাওর অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বহু খাতে অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হাওর অঞ্চলে বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। তা সত্ত্বেও আমরা হাওরের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

আবদুল হামিদ বলেন, ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণে কিশোরগঞ্জের হাওর-বাঁওর হচ্ছে প্রান্তিক এলাকা। এখানকার জনগণকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। ভাটি বাংলার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়েও কথা বলেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য পন্থা। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা জোরদারের তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জনগণ দুর্নীতিমুক্ত থাকলে সরকারি চাকরিজীবীরাও দুর্নীতি করতে পারবেন না।’ এজন্য জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

এই আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন মো. আফজাল হোসেন এমপি, মো. সোহরাব উদ্দিন এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, কলেজের অধ্যক্ষ ইসলাম উদ্দিন, ইটনা উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী ইসমাঈল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, প্রভাষক রোকন মকবুল প্রমুখ।

এর আগে ইটনা উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ও ইটনা মহেশচন্দ্র বিদ্যানিকেতন পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর