বিচারপতিদের পত্রপাঠ বিদায় করা হয়েছিল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতীতের সামরিক সরকার এবং বিএনপি’র শাসনামলে বিচারকদের পত্রপাঠ বিদায় দেয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অতীতের সামরিক সরকার ও বিএনপি’র শাসনামলে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও সংসদ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছিল। ৯৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেয়া বিচারকদের মধ্যে এ দিনেই ১০ জন বিচারককে পত্রপাঠ বিদায় দেয়া হয়েছিল । এভাবে একে একে সবাইকে বিদায় দেয়া হয়। পরে অবশ্য কয়েকজন রিট করে ফিরে আসেন। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। একজন প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে আছেন। তিনি জানেনও না তিনি নেই। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে তাকে বিদায় দেয়া হলো।
গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকালের এ বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধান বিচারপতি ইস্যুতেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন বিষয়ে সভায় দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। নেতাকর্মীরা ভোটের আগে বাড়িতে থাকতে পারেননি। লুকিয়ে থেকে তারা নির্বাচনের কাজ করেন। এক-এগারোর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরবর্তীতে আমরা দেখলাম প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে দেয়া হলো। যাতে করে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে যেটা করা হয়েছিল তার উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে করা যায়। সেজন্য তাদের দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক কেএম হাসান তাকে বানাল। যাতে প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তাদের ভোট চুরির সুযোগ করে দেন। ওই সময়কার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন একজন বিচারপতিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে ডেকে বললেন যে, আপনি পদত্যাগ করেন। এই যে অনিয়মগুলো আমরা প্রতিবাদ করার একদিন পরেই আমাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হলো। তারা ওয়ারেন্ট বা সার্চ ওয়ারেন্ট কিছুই দেয়নি। তারা গায়ের জোরে আমাকে গ্রেপ্তার করলো ও বাসা সার্চ করলো। একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া শুরু করলো। কিন্তু তারপরও আমরা থেমে থাকিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠপর্যায়ে ছিলেন। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকলের বিরাট ভূমিকা ছিল। জনগণ রুখে দাঁড়াল এবং আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। আমার ফিরে আসার সময় অনেকে প্রশ্ন করেছিল আমরা দেশ ছেড়ে পালাই-কিন্তু আপনি আবার যাচ্ছেন কেন? আমার ভেতরে এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে মামলা দেবে, ওয়ারেন্ট দেবে, আমিতো লুকিয়ে থাকব না। দেখি যা হওয়ার হবে। আমরা তখন যদি এই ঝুঁকি না নেই তখন দেশে নির্বাচনও হয় না, আবার গণতন্ত্র ফিরে আসে না। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করেছি। বিভিন্ন সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেজন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি। এক-এগারোর সময় বলা হয়েছিল আমি ঢাকায় নামলে গুলি করা হবে বা কোথাও ফেলে দেয়া হবে। আমি এসবের পরোয়া করি না। আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দু’টো বোন ছাড়া। দেশের মানুষের জন্য যখন কাজ করতে এসেছি তখন কে মারবে এসব চিন্তা করে লাভ নেই। যতক্ষণ শ্বাস আছে দেশের জন্য কাজ করে যাব এবং গণতন্ত্রের কথা বলে যাব। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে নির্বাচন যাতে অবাধ নিরপেক্ষ হয় আমরা সেটাই চাই। আমার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের একটা কথা, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে। ভোট মানুষের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার সেটা সে প্রয়োগ করবে স্বাধীনভাবে, নিরেপেক্ষভাবে। আজকে আমরা সরকারে আছি প্রত্যেকটা উপজেলা এবং স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে। যেমন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তো বিএনপি জয়ী হয়েছে। চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলো। আমরা তো বাধা দেইনি, আমরা তো রেজাল্ট বদলাইনি, মানুষের উপর জুলুম করিনি। যৌথ সভা  প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  নির্বাচন কমিশন সমস্ত দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমরা সে আলোচনায় যাবো। সেটার প্রস্তুতির জন্য ড্রাফট করা হয়েছে। আমি নিজেও সেগুলো দেখেছি। সেখানে এগুলো উপস্থাপন এবং পরামর্শ চাইবো। সেগুলোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজকে সে জন্যই এই সভা ডাকা। জনগণের মৌলিক অধিকার আর যেন কেউ ফিরিয়ে না নিতে পারে সেটাই আমরা আলোচনা করব। যে গণতান্ত্রিক সুফল মানুষ ভোগ করছে আমাদের আমলে সেটাই আমরা চাইবো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর