বাউল গানের আসর নিয়ে রায়পুরায় ভয়াবহ টেঁটাযুদ্ধ

নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল নিলক্ষায় বাউল গানের আসরকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গ্রামবাসীরা টেঁটা ও ককটেল নিয়ে হামলা চালালে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুড়ে।
এতে জালাল মিয়া (৩৩) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ পুলিশসহ কমপক্ষে ১৫ জন। রবিবার বিকাল ৫টা নিলক্ষা ইউনিয়নের দড়িগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত জালাল মিয়া দড়িগাঁও পূর্ব পাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে। সে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থেকে ৫ মাস পূর্বে দেশে ফিরেছিলেন।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষায় ইউনিয়নের দড়িগাও দক্ষিণপাড়া গ্রামে আব্দুল খালেক শাহ্’র ওরস উপলক্ষে শনি ও রবিবার দুই দিন ব্যাপী বাউল গানের আয়োজন করেন স্থানীয় লোকজন ও তার ভক্ত অনুসারীরা। এদিকে নিলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ সংঘর্ষ চলায় বাউল গানের অনুমতি দেননি পুলিশ। কিস্তু স্থানীয় লোকজন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গত শনিবার বাউল গানের আসরের আয়োজন করেন।

রোববার বিকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ বাউল গানের আসর উচ্ছেদে অভিযান চালায়। পুলিশ মঞ্চ ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে। বিকাল ৫টার দিকে অর্তকিতভাবে গ্রামবাসী টেঁটা ও ককটেল নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ জনতাকে লক্ষ্য করে শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এতে জালাল মিয়া ও শামসুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এই ঘটনার সময় গ্রামবাসী ৩ পুলিশকে আটক করে রাখে। পরে পুলিশ এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় আটক পুলিশদেরকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
images
গুলিবিদ্ধ জালাল মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত রায়পুরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাইজুল আলম, নায়েক শাহজাহান মিয়া, কন্সটেবল রাহিম, রাসেল ও এস এম মালেককে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

আহত রায়পুরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাইজুল আলম বলেন, অভিযানের সময় অতর্কিতভাবে গ্রামবাসীরা আমাদের উপর টেঁটা ও ককটেল নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার পায়ে একটি টেঁটাবিদ্ধ হয়েছে।

রাতে নিহত জালাল মিয়াকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসেন মা সাফিয়া খাতুন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর ঝগড়ার আওয়াজ পেয়ে আমার ছেলে ঘুম থেকে উঠে দেখতে গিয়েছিল। ওই সময় হঠাৎ সে পুলিশের সামনে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের গুলি তার স্ত্রী-সন্তানকে এতিম করে দিলো।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ শফিউর রহমান জানান, সংঘর্ষ প্রবণ এলাকায় বাউল গানের নামে জুয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে উশৃঙ্খল এলাকাবাসী টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের উপর হামালা চালায়। এতে পাঁচ পুলিশ আহত হয়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে এলাকাটি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়ছে। এই ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি তবে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।

উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস যাবৎ রায়পুরার নিলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। ওই সংঘর্ষে ৫ গ্রামবাসী নিহত হয়। রায়পুরা থানার ওসি ও ৫ পুলিশ সদস্য সহ কমবেশি দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে উপজেলা প্রশাসন অনিদিষ্ট কালের জন্য নিলক্ষায় গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর