পৃথিবীতে কোনো অমরত্ব কামনা করা যায় না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীতে কোনো অমরত্ব কামনা করা যায় না। এখানে কোনো স্থায়িত্বের আশা নেই। সব মানুষই পরকালের যাত্রী বা পরপারের যাত্রীর সন্তান। এই জীবন এক রাত বা দিনের সমষ্টিমাত্র। মৃত্যু অবধারিত ও সন্নিকটে। প্রতিটি নিশ্বাসেই মানুষের প্রাণ জন্ম থেকে দূরে সরে মৃত্যুর কাছাকাছি আসছে। তারপর প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছে। জীবিত ব্যক্তির আয়ু শেষ হয়ে গেলে তার মৃত্যু ছাড়া কোনো গতি নেই। তোমার মুহূর্তগুলো তোমাকে এমন সময়ে উপনীত করবে, যার পরে আর কোনো সময় নেই।

দিন-রাতের সময় কত দ্রুত আমাদের গুটিয়ে নিচ্ছে! আমাদের কাছ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, তারপর আমাদেরও নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিদিনের আশা-আকাক্সক্ষা ঘনিয়ে আসা মৃত্যুর সামনে অপসৃত। আমাদের পূর্ববর্তী লোকরা আজ কোথায়? রূপ আর সৌন্দর্যের অধিকারী এসব মানুষ আজ কোথায়? কালের আবর্তন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। অচিরেই আমাদের কাছেও আসবে তা। কত জীবিত মানুষকে আমরা মরতে দেখেছি! শিগগিরই আমাদেরও তদ্রপ অন্যরা দেখবে। মৃত্যু থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই। আমরা তো ভাবছি মৃত্যু মনে হয় আমাদের নাগাল পাবে না!

হে গাফেল, আমরা যে মানুষ, এ কথা কি তুমি ভুলে গেছ? নিয়তি আমাদের ঘিরে আছে। আমরা আছি একটি সফরে, চলছি কবরের গর্তের দিকে। মৃত্যু আমাদের বেষ্টন করে আছে। হাশরের ময়দান আমাদের জড়ো করবে। তবে আর কত তুমি উদাসীন ও অসচেতন থাকবে? তোমার কান কি সতর্ককারীর ডাকে সাড়া দেবে না? তিরস্কারকারীর কথায় তোমার হৃদয়ের ভেতরটা কি গলবে না?

তোমার কি বিনম্র হওয়ার সময় হয়নি? কোথায় তোমার তাহাজ্জুদ? আমরা কি ঘুমে বিভোর, নাকি হৃদয় পাথর হয়ে গেছে? হে ভাই, জাগ্রত হও, সাবধান! আর ঘুমিও না। হে বিভ্রান্ত মানুষ, তুমি তো ঘুমাচ্ছ, কিন্তু জাহান্নামের আগুন তো জ্বলছে! তার আগুন নিভে না, তার স্ফুলিঙ্গ নির্বাপিত হয় না। নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য চিরদিন বেঁচে ছিলেন না। আল্লাহ কাউকে অমরত্ব দিলে প্রথমে তিনিই অমর হতেন।

আমাদের দিকে মৃত্যুর অব্যর্থ তির তাক করা আছে। আজ কারও গায়ে তা না লাগলে আগামীকাল তো লাগবেই। ‘আপনার আগের কোনো মানুষের জন্য আমি অমরত্ব দান করিনি। আপনি মরবেন আর তারা অমর হয়ে থাকবে? প্রতিটি প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের অমঙ্গল ও কল্যাণ দিয়ে পরীক্ষা করি। তোমরা আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সূরা আম্বিয়া : ৩৪)।

যাদের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠতা ছিল, তারা আজ কোথায় গেল? যাদের প্রতি ভালোবাসায় নুয়ে পড়তাম, তারা কোথায়? কত প্রিয়জন চোখ বন্ধ করেছে! কত প্রিয়জনকে আমরা দাফন করে ফিরে এসেছি! অনেক স্বজনকে কবরে শুইয়ে আমরা চলে এসেছি! মরণ কি কখনও কাউকে ছাড় দিয়েছে? তুমি আর কত উদাসীনতা ও ভ্রান্তিতে হেলাফেলা করবে? এ রকম ঘুম আর কতকাল চলবে? জাগবে কখন?

জীবন নষ্ট হয়ে গেল, যার একটি মুহূর্ত দিয়ে আসমান-জমিনের সমতুল্য জগৎ করা যায়। তুমি চিরস্থায়ী জিনিসের বিনিময়ে নির্বুদ্ধিতা, সন্তুষ্টির বিনিময়ে ক্রোধ আর আর জান্নাতের বিনিময়ে জাহান্নাম ক্রয় করতে চাচ্ছ? তুমি নিজের শত্রু না মিত্র? আজ তুমি যা ইচ্ছা ও যা মন চায় তা করতে পার। আগামীকাল তোমাকে মরতেই হবে। নিয়তির কলম উঠিয়ে নেওয়া হবে।

পাপী ছোট ছোট পাপে লেগে থাকতে থাকতে বড় পাপে জড়িয়ে পড়ে। তবে মারাত্মক পাপ ও অবাধ্যতার ফলে মানুষের ঈমান শেষ হয়ে যায় না। তবে তার সবকিছু থেকে তওবা করা কর্তব্য। ‘হে মোমিন লোকরা, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা নূর : ৩১)।
আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করে দেন, যেন দিনের বেলার অপরাধী তওবা করে, তিনি দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধী তওবা করে, সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় হওয়া পর্যন্ত এটা চলতে থাকবে।’ (মুসলিম)।

দ্বীন হলো জীবনের মূলধন, ইহকাল ও পরকালের গৌরব। দ্বীন সব ক্ষতের নিরাময় করতে পারে। দ্বীনের ক্ষতের কোনো নিরাময় নেই। সব বিপদই দূর হয়ে যায়, তা যত বড়ই হোক; তবে ব্যক্তির দ্বীনের সংকট অনেক গুরুতর বিষয়। চারপাশে অধর্ম ও ফেতনার সয়লাবে সব উত্তাল অস্থির হয়ে গেছে। লোকালয়ে সাপবিচ্ছুর ছড়াছড়ি। মাটির নিচে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ কানের ভেতর বিচ্ছু। গোপনে সব সংক্রমিত হচ্ছে। পাথরের নিচে লুকিয়ে আছে বিষের ডিম। পৃথিবী এখন বিপদ ও সংকটাপন্ন।

তাই সংকটে ধৈর্যের প্রস্তুতি নাও। হুজায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা অনিষ্টের মধ্যে ছিলাম। আল্লাহ সেই অনিষ্ট দূর করেছেন। আপনার হাত দিয়ে কল্যাণ দিয়েছেন। এ কল্যাণের পর কি অকল্যাণ আসতে পারে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ হুজায়ফা বলেন, সেটি কীরকম? তিনি বললেন, ‘অন্ধকার রাতের টুকরোর মতো অসংখ্য ফেতনা একের পর এক আসতে থাকবে। গরুর চেহারার মতো একরকম দেখতে সেগুলো তোমাদের কাছে আসবে, তোমরা বুঝতে পারবে না কোনটা থেকে কোনটা আসল।’ (আহমাদ)।

আবু বকর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব বিষয় আমল করতেন, আমি সেগুলোর আমল কখনও ছাড়িনি। তাঁর কোনো বিষয় ছেড়ে দিলে আমি বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করি। তাই তোমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহর ওপর অবিচল থাক। দ্বীন, শরিয়ত, মূল্যবোধ ও চরিত্রের ওপর অটল থাক। ফেতনা সৃষ্টিকারী ভ্রষ্ট লোকদের থেকে সতর্ক হও। ‘আপনি তাদের থেকে সাবধান থাকুন, যাতে তারা আপনার প্রতি আল্লাহর অবতীর্ণ কোনো বিষয় থেকে আপনাকে দূরে সরাতে না পারে।’ (সূরা মায়েদা : ৪৯)। ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর