পাঁচ হাজার টাকায় সাইকেল হবে মোটরসাইকেল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তারুণ্যের বাহন সাইকেল। কিন্তু সাইকেল দীর্ঘক্ষণ চালানো কষ্টসাধ্য। দূরের পথে সাইকেল নিয়ে যাওয়াও দুষ্কর। এজন্য অনেকে সাইকেলের বদলে মোটরসাইকেল চালান। কিন্তু মোটরসাইকেল কেনার সাধ্য অনেকেরই নেই। অন্যদিকে বাজারে যেসব ইলেকট্রিক বাইক পাওয়া সেগুলোর দাম শিক্ষার্থী কিংবা অল্প রোজগেরেদের নাগালের বাইরে। কিন্তু আপনার যদি একটা বাইসাইকেল থাকে তবে এতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোজন করে ইলেকট্রিক বাইক বানিয়ে নিতে পারবেন। আর চলতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

বাই-সাইকেলের গতি কম।কিন্তু ই-বাইকে আপনি অনায়াসে ৩০-৪০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারবেন। এক চার্জে চলতে পারবেন কমছে কম ৩০-৬০ কিলোমিটার। ফলে রাজধানীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারবেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে জনপ্রিয় হয়েছে ই-বাইক। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিক সাইকেল আমদানি করে বিক্রি করছে। কিন্তু এসব সাইকেলের মূল্য বাইসাইকেলের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ফলে দেশীয় প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অনেকেই সাইকেলে ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ সংযোজন করে ইলেকট্রিক সাইকেল তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন ধরে সাইকেলকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করছেন স্যামুয়েল রানা অধিকারী। তিনি গাজীপুরের বাংলাদেশ অ্যাডভেন্টিস সেমিনারি অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। পাশাপাশি দেশীয় সাইকেলকে ইলেকট্রিক সাইকেলে রূপান্তরের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

তার সঙ্গে ঢাকাটাইমসের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি টিম যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একটি সাধারণ সাইকেলে ব্যাটারি, মোটর ও অন্যান্য সামান্য কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন করে ই-বাইকে রূপান্তর করা যায়। এজন্য খরচও তেমন বেশি না। পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করে ই-বাইক বানানো যাবে।

এছাড়াও, রাজধানীর বংশালের সাইকেলের দোকানগুলোতেও ই-বাইক তৈরির যন্ত্রাংশ মেলে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কিনে এনে আপনার সাইকেলটিকে মোটর চালিত সাইকেল বা ই-বাইক বানিয়ে নিতে পারেন। অথবা যেসব দোকানো ই-বাইককের সরঞ্জামাদি মেলে তাদের দিয়েও আপনার সাইকেলটি ই-বাইকে রূপান্তর করে নিতে পারেন। এজন্য আপনাকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা যন্ত্রাংশ সংযোজনের মজুরি দিতে হবে।

শহরে সাইকেলে করে শিশুদের খেলনা ফেরি করে বিক্রি করেন রাসেল। তিনি থাকেন কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায়। সে তার সাইকেলটিকে বংশাল থেকে ইলেকট্রিক বাইকে রূপান্তর করিয়ে নিয়েছেন। এখন তিনি ইকুরিয়া থেকে ই-বাইকে চড়ে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে চষে বেড়ান নগরের অলিগলি।

তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আগে প্যাডেল ঘুরিয়ে সাইকেল চালাতাম। ফলে শহরের অনেক এলাকায়ই খেলনা বিক্রির জন্য যেতে পারতাম না। আমার সাইকেলটিকে ইলেকট্রিক করার পর অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে বেচাবিক্রি করতে পারি। কায়িক পরিশ্রমও কমেছে।’

রাসেলের মত সাইকেলকে ইলেকট্রিক সাইকেলে রূপান্তর করেছেন নাজমুল। তিনি পড়েন ঢাকা কলেজে। হাওর বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা দোলাইরপাড়। আগে বাই-সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেতাম। এতটা পথ সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। এক বন্ধুর পরামর্শে সাইকেলটিকে ই-বাইক বানিয়ে এনেছি বংশাল থেকে। এখন এর ব্যাটারি এক চার্জ দিয়ে ঢাকা কলেজে গিয়ে ক্লাশ সেরে টিউশনি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। রাতে সাইকেলের ব্যাটারিতে চার্জ দেই।’

বংশালে কয়েক বছর ধরে সাইকেলকে ইলেকট্রিক সাইকেলে রূপান্তরের কাজ করছেন মোর্শেদ নামের এক সাইকেল মিস্ত্রী। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, তার কাছে ই-বাইক বানাতে বাইসাইকেল নিয়ে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। যন্ত্রাংশের মানভেদে খরচ ৫ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। দামটা ওঠানামা করে ব্যাটারির ক্যাপাসিটির ওপর। বেশি অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি সাইকেলে ব্যবহার করলে বেশি পথ চলা যায়। এজন্য একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে। মোটরের দাম প্রায় একই। তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরের দামও ভিন্ন ভিন্ন। এসব যন্ত্রাংশ চায়না থেকে আমদানি করা।’

দেশে এখন আকিজ ও গ্রিন টাইগারের তৈরি ইলেকট্রিক বাইক পাওয়া যায়। তবে এগুলোর দাম ৪০ হাজারেরও বেশি। রাজধানীতে অনেক দিন ধরে ইলেকট্রিক সাইকেলের যন্ত্রাংশ সংযোজন করে বিক্রি করছেন বিভিটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা উত্তরায়।

‘পরাগ’ নামে বিভাটেক তিনটি মডেলের ইলেকট্রিক সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। মডেলভেদে এগুলোর দাম ২২ হাজার টাকা থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে গিয়ে আপনার সাইকেলটি ইলেকট্রিক সাইকেল বানিয়ে আনতে পারেন।

রাজধানীর বংশাল ছাড়াও ধোলাইখাল, টিপুসুলতান রোড এবং নবাবপুরে ইলেকট্রিক সাইকেলের মোটর, ব্যাটারিসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।

ই-বাইকে চড়ে নগরকে দূষণ না করে পথ চলুন স্বাচ্ছন্দ্যে। আর খরচ? প্রতিবার এসব বাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে খরচ হবে ৪ থেকে পাঁচ টাকা। ফলে ১৫০ টাকা খরচ করে আপনি নগরে রাজারহালে পথ চলতে পারবেন।

সাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করুন। মেনে চলুন ট্রাফিক আইন। উল্টো পথে দিয়ে যানজট সৃষ্টি করে অন্যের বিরাগভাজন হবে না। নগরকে কোলাহল মুক্ত রাখতে আপনি হোক সবুজের সৈনিক।

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর