এক পা-ই যার ভরসা

জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজলুর রহমান। দুটি হাত ও একটি পা নেই তার। এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা করে সে। দিনমজুর পিতা সাহেব আলী। বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় সে। ইতিমধ্যে পিএসসিতে ২.১৭ ও জেএসসিতে ৩.৭৫ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সে স্থানীয় মিটুয়ানী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ৩ কি. মি.। এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে সে স্কুলে যাতায়াত করে। অর্থাভাবে সেই পড়াশোনাও এখন বন্ধের পথে। প্রতিবন্ধী ফজলুর রহমান জানান, ৩ কিলোমিটার দূরত্বের স্কুলে ১ পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাতায়াত করি। স্কুলে যাতায়াতের পথে ছোট বোন প্রতিদিন আমার বই বহন করে নিয়ে যায়। যে দিন সে স্কুলে না যায়, সেদিন বই বহনের কেউ না থাকায় আমার স্কুলে যাওয়া হয় না। কারণ অমরা ভাই-বোন দুজন একই স্কুলে পড়ি। আবার যেদিন বৃষ্টি হয়, সেই দিন স্কুলে যেতে পারি না। প্রতিদিনের সকল প্রয়োজনীয় সব কাজ মা করে দেন। লেখাপড়া শেষ করে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা এই কিশোরের। কিন্তু অর্থাভাবে সেই পড়াশোনাই এখন বন্ধের পথে। বিত্তবানদের সহায়তা পেলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় এই প্রতিবন্ধী কিশোর। দিনমজুর পিতা সাহেব আলী বলেন, অভাব-অনটনের সংসার, প্রতিদিন যা রোজগার করি তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর। ফজলু লেখাপড়া ভালো করলেও টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় অনেক বই কিনে দিতে পারি না। ওর নামে প্রতিবন্ধী কার্ড আছে, সেখান থেকে যা সহায়তা পাওয়া যায় তা ওর লেখাপড়ার কাজে লাগে। মাত্র ৪ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি। প্রতিদিনের আয়ে চলে পরিবারের ৮ সদস্যের সংসার। ৪ মেয়ের মধ্যে ৩ জনের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে তাঁতের কাজ করে। ছোট মেয়ে আসমা খাতুন প্রতিবন্ধী ফজলুকে স্কুলে যাতায়াতে সাহায্য করে এবং ফজলুর সঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে লেখাপড়া করে।
প্রতিবন্ধী ফজুলর মা সারা খাতুন বলেন, ২০০০ সালের ফজলু বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়। স্বামী-স্ত্রী কেউ লেখাপড়া জানি না। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে স্কুলে আনা নেয়া ও লেখাপড়ায় সহায়তা করে। ফজলুর দু’হাত ও এক পা না থাকলেও এক পা দিয়েই ভাত খাওয়া, টিউবওয়েলের পানি উত্তোলনসহ কিছু কিছু কাজ সে নিজেই করতে পারে।
স্থানীয় মিটুয়ানী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) আইয়ুব আলী জানান, ২০১৪ সালে ফজলু এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সে লেখাপড়ায় ভালো, স্মরণ শক্তিও প্রখর। বর্তমানে তারা দুই ভাই-বোন ৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
শাহজাদপুরের উদ্যমী যুবক মামুন বিশ্বাস ফেসবুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে প্রায়ই আশপাশের এলাকার অনেক ভুক্তভোগী মানুষের সহায়তায় করে থাকে। ফজুলকে নিয়েও সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম হাত-পা সংযোগ করা গেলে হয়তো দরিদ্র প্রতিবন্ধী ফজলুর রহমানের জীবনের গতি পাল্টে যেতে পারে। তাই তার সহায়তায় ফেসবুকের মাধ্যমে বিত্তবানদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর