ইউএসএআইডি- এআইএন প্রকল্পের পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ পদ্ধতির ব্যাপক

চিংড়ি শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখলেও বর্তমানে তা ক্ষতির সম্মুখীন। এ শিল্পকে বাঁচাতে এবং মানসম্মত অধিক চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রিশন (এআইএন) প্রকল্পের মাধ্যমে ঘেরে পরিবেশবান্ধব আধুনিক পদ্ধিতিতে চিংড়ি চাষ ও পাড়ে সবজি চাষ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা করে আসছে বিগত ২০১২ সাল থেকে।

এরই ধারাবাহিকতাই মাধব সানা ২০১৩ সালের প্রথমেই ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রিশন (এআইএন) প্রকল্পের চাষি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণে মনোযোগ সহকারে অংশ গ্রহণ করে তিনি সঠিক নিয়মে ঘের প্রসÍুত, ঘেরে নিয়মিত চুন, সার ও খাদ্য প্রয়োগ, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পিসিআর পোনা মজুদ, মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান লাভ করেন এবং বুঝতে পারেন যে এসব বিষয়গুলোর উপর সঠিক জ্ঞান না থাকাই তিনি সহ আশেপাশের সকল চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বছরের পর বছর। তিনি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ঘের পরিচালিনা শুরু করেন যদিও তিনি ২০০৮ সাল থেকে গতানুগতিক সনাতন পদ্ধতিতে ঘের করে আসছিলেন যা তাকে কোনদিন তেমন ভালো ফল দিতে পারেনি।

মাধব সানা ২০১৫ সালের প্রথম থেকেই ঘেরের তলার পচা কাদা তুলে ভেড়ি-বাধ উচু করে ভালো করে ঘের প্রস্তুত করেন, পানির গভিরতা ঠিক রাখা, নিয়িমিত ও সঠিক পরিমানে চুন, সার, খাদ্য প্রয়োগ, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পিসিআর পোনা সঠিক ঘনত্বে মজুদ, মাটি ও পানির গুনাগুন সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা, স্থায়ী নার্সারি তৈরি, জৈব্য নিরাপত্তা বজায় রাখা ও ঘেরের ভালো পরিবেশ বজায় রেখে ঘের পরিচালনা শুরু করেন। এভাবে ঘের করে তিনি ২০১৫ সালে তার লিজ নেওয়া ২৬৪ শতক ঘের থেকে ৬৬৪ কেজি বাগদা চিংড়ি, ২৪৫ কেজি সাদা মাছ ও ৭০ কেজি হরিনা চিংড়ি বিক্রি করেন যার বাজার মূল্য যথাক্রমে ৪৫১৫২০ টাকা, ৪০৯৫০টাকা এবং ১৮২০০ টাকা। তিনি তার ঘেরে চুন, সার, খাদ্য, পোনা, মুজুরি ও লিজ বাবদ মোট ১৮৬০৭০ টাকা খরচ করেন এবং নীট লাভ করেন ৩২৪৬০০ টাকা।

মাধব সানা কখন চিন্তাও করেননি যে তিনি তার এত অল্প জায়গায় থেকে এত পরিমাণ উৎপাদন ও এত বেশি লাভ করতে পারবেন। তিনি তার এই ফলাফলের জন্য খুবিই আনন্দিত এবং নিজেকে একজন সফল চাষি হিসাবে গর্ববোধ করেন।

মাধব সানা ২০১৫ সালে সিএফ ও ২০১৬ সালে এলএসপি হিসাবে এআইএন প্রকল্পে কাজ করেন এবং তার আশেপাশের অনেক চিংড়ি চাষিদেরকে প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি চিংড়ি চাষের পাশাপাশি বাগদা পিএল এর ব্যবসা করছেন এবং তিনি তার ব্যবসাকে আরও বড় করবেন আশা করছেন। মাধব সানা মনে করেন তার এই সফলতা তার সমাজে গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়াবে এবং তার ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

মাধব সানা এর এই আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব উন্নত এমটিটি পদ্ধতিতে অধিক চিংড়ি উৎপাদন করাই এবং আশেপাশের চিংড়ি চাষিদের অধিক চিংড়ি উৎপাদনের জন্য উদ্বোধকরণ ও পরামর্শ প্রদান করাই বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৬ তে তিনি কয়রা উপজেলার শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষি হিসাবে পুরস্কৃত হন। তিনি মনে করেন এই পুরস্কারের জন্য তিনি যে সম্মান পেয়েছেন তার পিছনে একমাত্র অবদান হচ্ছে ইউএসএআইডি-এআইএন প্রকল্প। তাই তিনি ইউএসএআইডি-এআইএন প্রকল্পের এই উন্নয়ন্মুলক কর্মকান্ড়ের সাথে জড়িত সকলের প্রতি কৃৎজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সাথে সাথে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কৃত করাই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর