আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না : প্রধানমন্ত্রী

আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না, কাউকে পরোয়া করি না। কারও কাছে মাথা নত করি না। বাবার আদর্শ নিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবন উৎসর্গ করবো, যেকোনও ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার বিকালে মাগুরার মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি এসময় বলেন, বাবার মতো বুকের রক্ত দিয়ে আপনাদের সেবা করবো এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট চুরির অপরাধে জনগণ যাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে তারা আবারও ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। আমরা তা কার্যকর করেছি। এই বাংলায় যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হোন, আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। আশা করি ২০১৯ সালের নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দেবেন। আমাদের লক্ষ্য উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের কোনও ঘর অন্ধকার থাকবে না। প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। দেশ যাতে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের প্রত্যক জেলাকে আমরা ভিক্ষুকমুক্ত করবো। সেই

ব্যবস্থা করছি। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি।’

মাগুরাবাসী উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাগুরায় আমি খালি হাতে আসিনি। উপহার নিয়ে এসেছি। মাগুরাবাসীর দাবি, তারা নাকি রেল লাইন দেখেনি, রেল লাইন দিতে হবে। রেল লাইন যাতে হয় ইনশাল্লাহ সে ব্যবস্থা করবো।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন-শিল্পমন্ত্রী ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুস কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল প্রমুখ।

এর আগে মাগুরায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে নামফলক উন্মোচন করে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন ও ভিক্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের আগে বিশেষ মোনাজাত হয় এবং এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ১৯টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মাগুরা ২৫০-শয্যা হাসপাতাল, শ্রীপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, মহাম্মদপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ফটকি নদীর উপর ১০০.১০ মিটার ব্রীজ নির্মাণ, কাটাখালী জিসি-ইছাখাদা আর এন্ড এইচ পর্যন্ত প্রায় ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, ৩০.৫০ মিটার নতুন বাজার সেতু, ৩৫০ ঘনমিটার প্রতি ঘন্টা ক্ষমতা সম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রশাসনিক ভবন, বেলনগর এলাকায় হেচারীসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার (তৃতীয় পর্যায়), আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ৫০-শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০-শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, মাগুরা টেক্সটাইল মিল পুনঃ উৎপাদন কার্যক্রম, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

প্রধানমন্ত্রী ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, মাগুরা আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিস ভবন, ফটকি নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, বরইচারা আটিরভিটা-বরইচারা বাজার সড়কে ফটকি নদীর উপর ৬৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, চিত্রা নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ ৪ লেনে উন্নিতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিইবেশন সেন্টার, শ্রীপুর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম এবং শালিখা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর