আবদুল হামিদ হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি

জাকির হোসাইনঃ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ। সংবিধান অনুযায়ী আগামীকাল থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে সর্বত্র আলোচনা চলছে- কে হচ্ছেন ২১তম রাষ্ট্রপতি? এ আলোচনায় বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। মো. আবদুল হামিদকে কেন্দ্র করেই বেশি আলোচনা চলছে সকল মহলে ও ক্ষমতাসীন দলটি কাছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ। সে হিসেবে ২৩ এপ্রিল তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শিগগিরই স্পিকারের সঙ্গে আলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। পরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। কারণ নির্বাচন হবে সংসদ অধিবেশন কক্ষে। ভোট দিয়ে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন সংসদ সদস্যরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ পাচ্ছে নতুন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন, এ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। এ আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

আওয়ামী লীগ এবং সরকারি নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র বলছে, দলের সংকটে দায়িত্বে থাকা বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে আবার মনোনয়ন দিবেন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ইস্যুটিও দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটে পতিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষিত আস্থাভাজন এবং সাহসী রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলটি।

দলের নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির মেয়াদে আবদুল হামিদ সকল রাজনৈতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। নৈতিক দৃঢ়তা দিয়ে তিনি এটি অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ অনুযায়ী একাধিক প্রার্থী হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে কাজ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদের চলমান ১৯তম অধিবেশন শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এর পর আবার অধিবেশনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। সে অনুসারে স্পিকার ও সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে সংসদ সচিবালয় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে ইসি সচিবালয়কে সরবরাহ করবে।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ভাটি শার্দূল মো. আবদুল হামিদ।

কিশোরগঞ্জ-৪ (মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম) থেকে ৭ বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, মাননীয় ডেপুটি স্পিকার, দুইবার মাননীয় স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা, মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থেকে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে সর্বদা জননন্দিত একজন সফল ব্যাক্তিত্ব হিসাবে বাংলার মানুষকে জয় করেছেন তিনি। কিশোরগঞ্জ তথা হাওরবাসীর কাছে ভাটির শাদুর্ল হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ এ্যাডভোকেট আবারো ও হতে যাচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। দলমত নির্বিশেষে জেলার সকল জনগণ তাকে সমর্থণ যানাছেন। এ খবরে কিশোরগঞ্জ জেলার সকল অধিকারীরা দোয়া ও সমর্থণ করছেন। আব্দুল হামিদ এ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।

আব্দুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন ভৈরব কেবি স্কুলে এবং নিকলী জেসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে  আইএ ও বিএ ডিগ্রী এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়কাল পর্যন্ত  পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আব্দুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদীয় আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার  বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) এর সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ  জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন ।

১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুল হামিদ ৭ম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে  দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্য়ন্ত  বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে  দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার নির্বাচিত হন।

দেশবাসীর কাছে ভাটি শার্দূল মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মহোদয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করিবেন, আল্লাহ তায়ালা উনাকে সুস্থতা এবং দীর্ঘ হায়াত দান করুন। যাতে দেশবাসির জন্য কাজ করে সোনারবাংলা গড়তে পারেন।আমৃত্যু বাংলাদেশ ও দেশবাসীর সেবা করার তৌফিক দান করুন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর