আইভি রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ২৪ আগস্ট। বেগম আইভি রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। তারপর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৪ আগস্ট মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এ দিবসটি পালনের জন্য ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া বুধবার বিকেলে ঢাকায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল­ুর রহমানের গুলশানের বাসভবনে মিলাদ, কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আজ তার বাবার বাড়ি চন্ডিবের এলাকায়ও এক মিলাদ ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

আইভি রহমানের পুরা নাম বেগম জেবুন্নেছা আইভি। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ভৈরবের কৃতি সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা ( প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ছিলেন তাদের বিয়ের সাক্ষী।

১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব শহরের চন্ডিবের গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার কামাল সরকারের বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জালাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম একজন আদর্শ গৃহিণী ছিলেন। ৮ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্য আইভি রহমান ৫ম সন্তান।

রাজনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও আইভি রহমানের বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বড় বোন সামসুন্নাহার সিদ্দিক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার শাশুড়ি। সেই সূত্রে আইভি শেখ রেহানার খালা শাশুড়ি। তার এক ছেলে নাজমুল হাসান পাপন ও দুই মেয়ে তানিয়া ও ময়না।

আইভি রহমান ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৮০ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতিসহ আর বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালনসহ রাজপথের মিছিলে তিনি থাকতেন সবার আগে। সভা সমাবেশে তিনি কখনই মঞ্চে বসতেন না। সভা স্থলের নিচে মাটিতে বা মঞ্চের সাইডে বসতেন তিনি। রাজপথ কাঁপানো নেত্রী ছিলেন তিনি। ভৈরবের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। দুঃখী মানুষের পাশে তিনি সব সময় থাকতেন।

২১ আগস্ট আইভি রহমান মারাত্মক আহত হলে এ খবরটি তাৎক্ষণিক জিল্লুর রহমানকে জানানো হয়নি। তাকে জানানো হয় আইভি সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। ঘটনার দেড়দিন পর জি­ল্লুর রহমান জানতে পারেন নির্মম সত্যটি।

২৩ আগস্ট তিনি প্রথম ও শেষ বারের মতো হাসপাতালে আইভি রহমানকে দেখতে যান। ৪৬ বছরের জীবন সঙ্গীর সঙ্গে এটাই ছিল তার শেষ দেখা। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ভৈরবে উত্তেজিত জনতা সুবর্না ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং হরতাল পালন করে। সেই সময়ে বিএনপি সরকার দেশের মানুষের উত্তজনার কথা ভেবে তার লাশ ভৈরবে নিতে দেয়নি। পরে তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আন্দোলন সংগ্রামে আইভি রহমানের অবদানের কথা বাঙালি জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর