অমানবিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মেয়রের মানবিক আবেদন

অসহনীয় যানজটে নগরবাসীর যখন নাভিশ্বাস অবস্থা ঠিক সেই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের একটি আহ্বান তাদেরকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাতে পারে। সোমবার একটি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে সাপ্তাহিক অথবা সরকারি ছুটির দিনে সভা-সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মেয়র বলেছেন, প্রায়ই দেখা যায় কিছু রাজনৈতিক কর্মী পুরো রাস্তা দখল করে সভা-সমাবেশ করায় নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর কবলে পড়ে পরীক্ষার্থী, গুরুতর অসুস্থ রোগীসহ সাধারণ মানুষের গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য তিনি যানজট সৃষ্টিকারীদের মানবিক হওয়ার অনুরোধ করেছেন। আমরা মনে করি, মেয়রের এ আহ্বানের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মান দেখানো উচিৎ। এটা নিশ্চিত রাজধানীর যানজটের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ এককভাবে দায়ী না হলেও বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এমনিতেই নানা কারণে ঢাকার যানজট এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ যুক্ত হয় তাহলে পুরো রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। এমন অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা আমরা বলতে পারি। এজন্য নগরবাসীর চরম ভোগান্তির কথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক ২০১০-১১ অর্থবছরের কিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, যানজটের কারণে রাজধানীতে প্রতিবছর বাণিজ্যিক ক্ষতি ২৩ হাজার কোটি টাকা। এতে প্রতিদিন নগরবাসীর ৩২ লাখ কমর্ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সেই হিসাবে বলা যায়, গত কয়েক বছরে যানজটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। মেয়রের আহ্বানকে তাই আমরা সমর্থন করি। তবে শুধু কথার কথা নয়, এজন্য তার নিজেকেও কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করা, যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ, রাস্তার ওপরে রাখা নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাজধানীর যানজটের পেছনে এগুলোরও বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা জানি মেয়রের একার পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব নয়; কেননা এর সঙ্গে প্রভাবশালী গোষ্ঠির স্বার্থ জড়িত আছে। আর তারা এতটাই ক্ষমতাবান যে তাদের দাপটের কাছে মাথা নত করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগোযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও। একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও মহাসড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গিয়ে তাকে ব্যর্থ হতে হয়েছে। এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে তাকে আমরা বলতে শুনেছি, প্রভাবশালীদের কারণে তিনি মহাসড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারেননি। তাই আমরা মনে করি, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে হলে সবার আগে নগরবাসীকেই আন্তরিক হতে হবে। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ এবং তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনই পারে এই অসহনীয় ভোগান্তির হাত থেকে কিছুটা বাঁচাতে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর