অভিবাসীদের দুর্দশা লাঘবের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসীদের দুঃখ, দুর্দশা লাঘব করে তাদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আমাদের অবশ্যই অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে। প্রত্যেক অভিবাসী যেন মর্যাদা পায় এবং নিরাপদে চলাফেরা ও কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। খবর বাসসের।

শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসন আর কোনোভাবেই ‘আমাদের’ এবং ‘তাদের’ মধ্যেকার বিষয় নয়, এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি।’

বৈশ্বিক উন্নয়ন রূপকল্প যা এজেন্ডা ২০৩০ নামেই সমাধিক পরিচিত, অভিবাসনকে টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বাস্তবায়নের জন্য আমাদের স্বার্থের কেন্দ্রমুখীনতাকে চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের চাহিদা, প্রত্যাশা, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে।

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উ হংবো, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম লেসি সুইং, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডার, ইউএন ওমেন-এর ইন্টার গভর্নমেন্টাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ বিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল লক্ষীপুরী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অভিভাসন বিষয়ক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ফ্রাংকোয়িস ফৌনাট অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

নতুন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গ্যুটারেজের একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয় এবং সিভিল সোসাইটির পক্ষে জিএফএমডি সিভিল সোসাইটি ডেইজ (সিএসডি) সভাপতি কলিন রাজা জিএফএমডি২০১৬ সম্পর্কে সিভিল সোসাইটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠনে স্বাগত বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী ‍উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলামও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ শুধু কাজের জন্য নয়, বহুবিধ কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিচরণ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে, বিপুলসংখ্যক মানুষের বিচরণ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কীভাবে মানুষের চলাফেরা আরও নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারি। পাশাপাশি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, একজন ব্যক্তি যেন তার ইচ্ছানুযায়ী চলাফেরা করতে পারেন।

অভিবাসনকে একটি জটিল মানবিক ব্যাপার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিবাসন এবং অভিবাসীকে ভয় পাওয়ার বা তাদের এড়ানোর কোনো কারণ নেই। বরং অভিবাসন সুশাসনে উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে অভিবাসনের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এপ্রিলে, বাংলাদেশ একটি ব্যাপকভিত্তিক ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন গভার্নেন্স’ প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমি এটা দেখে আনন্দিত হয়েছি যে, বিশ্ব আমাদের মাইগ্রেশন কমপ্যাক্ট প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু সংক্রান্ত একটি ব্যাপকভিত্তিক বৈশ্বিক চুক্তি বা কমপ্যাক্টে উপনীত হওয়ার জন্য কাজ করছি যাতে তা ২০১৮ সাল নাগাদ জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে, এক্ষণে একটি নতুন চুক্তি প্রণয়নে আমি আপনাদের উচ্চাভিলাষী, বাস্তববাদী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে আহ্বান জানাতে চাই। এজেন্ডা ২০৩০-এ অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বিয়য়ে যে অঙ্গীকার আমরা করেছি তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটি অনুমানযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সময় এসেছে, এখন জিএফএমডি’কে অকপটে এবং নির্ভয়ে কথা বলতে হবে। আমি আনন্দিত যে জিএফএমডি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেমন- সঙ্কট ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অভিবাসী, অভিবাসনের সুশাসন, বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতি ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন। প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো একটি অসাধারণ গল্প আছে। একজন অভিবাসী যখন তাঁর পরিবার এবং দেশ ত্যাগ করেন, তখন তাঁকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। অভিবাসীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, শ্রম এবং সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশের সমাজের উন্নয়নে অবদান রেখে থাকেন। তারা তাদের জীবনের সবচেয়ে মূলবান সময় অন্যের জন্য ব্যয় করেন। আমরা অনেক সময় তাঁদের মানবিক বিষয়গুলো এবং মানুষ হিসেবে ন্যূনতম অধিকারগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসী সংক্রান্ত বিষয়গুলির প্রতি গভীর মনোযোগ আকর্ষণ এবং অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আমরা এখন স্বীকার করি যে, অভিবাসন বিভিন্ন সম্প্রদায়, অর্থনীতি এবং সমাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্যও অভিবাসন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈচিত্র্যময় এবং এই সংযুক্ত বিশ্বে, অভিবাসন অসম্ভভাবী এবং অপরিহার্য। অভিবাসীসহ মানুষে মানুষে সহমর্মিতার জন্য বৈচিত্র্যের যে কল্যাণ, তা সব সমাজকে অনুধাবন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিএফএমডির সভাপতি পদে বাংলাদেকে সমর্থনদানের জন্য তিনি সব বন্ধু এবং সহযোগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

ঢাকায় আগত যারা বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

১২৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও অধিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিরা এই তিন দিনব্যাপী জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। অভিবাসন ও বৈশ্বিক শরণার্থী পরিস্থিতির করণীয় নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবারের এই সম্মেলনে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর